গাজার শিশুদের চোখের আলো কেড়ে নিচ্ছে ইসরাইলের সেনারা

প্রকাশিতঃ মে ৬, ২০২৫ | ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মার্চ মাসের ২৫ তারিখ। গাজার বেইত লাহিয়ায় সকালটা ছিল অন্যসব দিনের মতোই। ঘরের বাইরে খেলতে বের হয় সাত বছরের মোহাম্মদ হিজাজি। একটুখানি আনন্দের খোঁজে। চারপাশে ধ্বংস, শ্বাসরুদ্ধ বাতাস, অজানা আতঙ্ক- তবুও শিশুদের মন তো যুদ্ধ মানে না। কিন্তু সেদিনের সকালটা আর স্বাভাবিক রইল না। হঠাৎ, এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তেই নেমে আসে নীরবতা। তারপর চিৎকার। নিভে গেল মোহাম্মদের ডান চোখের আলো। থমকে গেল সেই নিষ্পাপ শিশুর শৈশব। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একের পর এক হামলা, আর অবিস্ফোরিত বোমায় গাজার শিশুদের চোখের আলো কেড়ে নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এপি। বিস্ফোরণের পর মোহাম্মদের বাবা খালেদ হিজাজি, ছুটে যান সেখানে। তিনি দেখতে পান, রক্তাক্ত ছেলের ছোট্ট দেহটা পড়ে আছে মাটিতে। আশপাশে আরও কিছু শিশুর কান্নাও শোনা যাচ্ছিল। কেউ আবার একেবারে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে। বিস্ফোরণটা ঘটেছিল এক অবিস্ফোরিত বোমার কারণে। যেটি ইসরাইলি বাহিনী তাদের সামরিক অভিযানের সময় রেখে গিয়েছিল। তার ডান চোখটা আর কখনো আলো দেখবে না। ডাক্তাররা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু গাজার সীমাবদ্ধ চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে অনেক চেষ্টা করেও তারা কিছু করতে পারেননি। পরে তাকে একটি বিশেষ চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। ফিলিস্তিনি কিশোরী মাইসা আল-গানদুরও একই পরিস্থিতির স্বীকার হয়। একসময় স্বপ্ন দেখত চিকিৎসক কিংবা শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু মাত্র ১৪ বছর বয়সে এক ইসরাইলি হামলায় তার চোখের দৃষ্টিও চলে গেছে। মাইসা বলেছে, ‘আমরা গাজায় আর জীবনযাপন করছি না। কেবল মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের জীবন মৃত্যুতে পরিণত হয়েছে।’ মাইসা, তার ছোট বোন ইয়ারা (৯) ও ভাই মোহাম্মদ (১১) তিনজনই ২৬ জুলাই গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের আল-কারারা শহরের ইলাবুন হাইস্কুলে এক গোলাবর্ষণে আহত হয়। ইসরাইলি বাহিনীর ওই হামলায় তাদের শরীরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন শার্পনেলের টুকরো বিদ্ধ হয়। মাইসার দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ইয়ারা এক চোখ হারিয়ে ফেলে। আর মোহাম্মদ মাথায় মারাত্মক আঘাত পায়। তাদের পরিবার কয়েকবার বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার আশায় ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেই আশ্রয়স্থলেও নেমে আসে মৃত্যুর ছায়া।