জাতীয় পর্যায়ে দেশে শিশু দারিদ্র্যের হার প্রায় ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামে শিশু দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণেরও বেশি। গ্রামীণ এলাকায় শিশু দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ; অন্যদিকে শহরাঞ্চলের ৮ দশমিক ২২ শতাংশ শিশু দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস করে। বুধবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মাসিক ইকোনমিক আপডেট ও আউটলুক প্রকাশ করে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
একনেক ব্রিফিং শেষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে আলাদা ব্রিফিং করেন জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেন। তিনি জানান, সম্প্রতি জিইডি এবং ইউনিসেফের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শিশু দারিদ্র্যের উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। ‘শহর-গ্রাম বৈষম্য : বাংলাদেশে শিশু দারিদ্র্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ, মৌলিক পরিষেবা এবং সামাজিক অবকাঠামোতে প্রবেশাধিকার’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, বয়সের ভিত্তিতেও শিশু দারিদ্র্যের হারে ভিন্নতা রয়েছে। শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার, যাদের মধ্যে এই হার ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে তা আরও কমে ১৩ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয়, সব বয়স গ্রুপ গ্রামীণ এলাকায় শিশু দারিদ্র্যের হার শহরাঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই চিত্র শিশুর মৌলিক চাহিদা ও পরিষেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়, যা লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, শিশু দারিদ্র্যের হারে উলেখযোগ্য আঞ্চলিক বৈষম্যও দেখা গেছে। রংপুর বিভাগে শিশু দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, যা ২৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, যেখানে এই হার ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগে শিশু দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে এই হার তুলনামূলকভাবে কম, ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এদিকে জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলে যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এর প্রধান কারণ চালের দাম। মোট খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে চালের দামের অবদান ৩৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। মাছের বিশেষ করে ইলিশের দামের অবদান ২৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, শাকসবজির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ফলের অবদান ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে চালের দামে অবদান ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, মাছের ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, শাকসবজির ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ফলের অবদান ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।