এবার ইউরোপে ইসরাইলকে নিষিদ্ধের ডাক

প্রকাশিতঃ মে ১১, ২০২৫ | ১০:৩০ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চরম মানবিক সংকট ঘিরে বিতর্কের মধ্যে দখলদার ইসরাইলের ওপর আরও চাপ এসে পড়ল সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে। এবার ইউরোপের অন্যতম প্রধান ‘গানের প্রতিযোগিতায়’ নেতানিয়াহুর দেশকে নিষিদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের পটভূমিতে ইউরোপজুড়ে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অভূতপূর্ব নৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল, আর্ট এক্সিবিশন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষণ মঞ্চ—সবখানেই উঠছে এক প্রশ্ন: যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো রাষ্ট্র কি আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির অংশ হতে পারে? এই প্রশ্নের সূচনা হয় ইউরোপের একদল সাবেক শিল্পীর একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে। সম্প্রতি ইউরোভিশনের ৭২ জন সাবেক প্রতিযোগী এক খোলা চিঠিতে ইউরোপিয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ)-কে অনুরোধ করেছেন, যেন ইসরাইলকে এবারের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় ইসরাইলের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনার জন্য ইবিইউ-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আরটিই। শনিবার আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরটিই-এর মহাপরিচালক কেভিন বাকহার্স্ট গাজার চলমান সংকট এবং ইসরাইলি জিম্মিদের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ নিয়ে সংবাদ কাভারেজে আরটিই নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা কেএএন-এর ওপর রাজনৈতিক চাপ দিচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন বাকহার্স্ট। সম্প্রতি ইউরোভিশনের ৭২ জন সাবেক প্রতিযোগী এক খোলা চিঠিতে ইবিইউ-কে অনুরোধ করেছেন, যেন রাশিয়ার মতো ইসরাইলকেও এবারের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, ইসরাইলের অংশগ্রহণ গাজার যুদ্ধাপরাধকে ‘স্বাভাবিকীকরণ ও বৈধতা দেওয়ার’ সামিল। তাদের মতে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য ২০২২ সালে যেমন রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, একইভাবে গাজায় হামলার প্রেক্ষাপটে ইসরাইলকেও নিষিদ্ধ করা উচিত। এদিকে ইবিইউ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা উদ্বেগগুলো সম্পর্কে সচেতন। তবে ইউরোভিশনকে একটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, ইতিবাচক ও ঐক্যবদ্ধকারী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে রাখতে চায় তারা। ইবিইউ কিংবা কান ফিল্ম ফেস্টিভালের মতো সংগঠনগুলো মূলত দীর্ঘদিন ধরে ‘রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে পৃথক’ রাখার নীতিতে বিশ্বাসী। তবে সমালোচকরা বলছেন, নিরপেক্ষতার নামে নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াও একধরনের পক্ষপাত। যুদ্ধ, নিপীড়ন ও গণহত্যার সময়ে সংস্কৃতি কখনোই নীরব দর্শক হতে পারে না। উরোপজুড়ে ইসরাইলবিরোধী সংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া এখন আর কেবল প্রতীকী নয়—এটি এক নৈতিক অবস্থান। ইউরোভিশন একটি উদাহরণ মাত্র। আসল প্রশ্ন হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো রাষ্ট্র সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে কি না? এই দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক পরিসর কিভাবে রূপ নেবে, তার দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।