অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি বিদ্যালয় ইসরাইলি বোমা বিস্ফোরণে সম্পূর্ণ আগুনে ভস্মীভূত হয়। এ সময় সেখান থেকে নারী ও শিশুদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল এবং এর মধ্যে এক ফিলিস্তিনি কন্যা শিশু অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে।
গাজা শহরের আদ-দারাজ এলাকার ফাহমি আল-জারজাওয়ী স্কুলে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে। স্কুলটি মূলত ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সোমবার রাতে ইসরাইলি বিমান হামলায় এটি ধ্বংস হয়ে যায়।
ইরানী বার্তা সংস্থা ইরনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হামলায় স্কুল ভবনটি ধসে পড়ে এবং ব্যাপক আগুন ধরে যায়। যেখানে অসংখ্য নারী ও শিশু আটকা পড়ে। আগুনের মধ্যে থেকে তাদের চিৎকার ও সাহায্যের আকুতি শোনা যাচ্ছিল। এই বর্বরতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে-
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ মোহাম্মদ মারান্দি তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘অবরুদ্ধ গাজায় শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে ব্রিটেন দখলদার ইসরাইলি সরকারকে সাহায্য করছে’।
আরেকটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘গাজা কোথায়? এটা কি সেই জায়গা, যেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়?’
‘এটা মতবিরোধ নয়, নির্মম হত্যাকাণ্ড!’
সাংবাদিক ও এক্স-এর সক্রিয় ব্যবহারকারী এলহাম আবেদিনি এই ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘কার সঙ্গে আমরা মতবিরোধ মেটাবো? সেই বর্বর দখলদার সমর্থকদের সঙ্গে, যারা ফিলিস্তিনি এক শিশুকে এভাবে আগুনের মধ্যে অসহায়ভাবে ছেড়ে দিয়েছে? এখানে কোনো মতবিরোধ নেই যা মেটানো যায়—এটা চিরন্তন এক নির্মম হত্যাকাণ্ড’।
ইসরাইলবিহীন বিশ্ব শিশুদের জন্য আরও সুন্দর
সালাহউদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি এক্স-এ লিখেছেন, ‘এটা গাজায় শিশুদের নিত্যদিনের গল্প... ইসরাইলবিহীন বিশ্ব শিশুদের জন্য আরও সুন্দর একটি জায়গা হবে...।’
হোসেন ইয়াজদি নামের আরেকজন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এক ফিলিস্তিনি শিশু আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে ছুটছে—এই দৃশ্যটি গাজা শহরের ফাহমি আল-জারজাওয়ী স্কুল থেকে তোলা। যা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারদের আশ্রয়স্থল ছিল। এই স্কুলেই ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণ করেছিল। এটাই ইসরাইলি গণহত্যা এবং পশ্চিমা সমর্থনের চেহারা’।
মোহাম্মদ সাফা নামের এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে এক ফিলিস্তিনি শিশুর ছুটে চলার ভিডিওটি বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যমের প্রথম পাতায় থাকা উচিত। স্কুলে বোমা হামলার সময় ঘুমন্ত এক ফিলিস্তিনি মেয়ে আগুন থেকে বাঁচতে ছুটছে’।
মাহদি নামের আরেকজন ব্যবহারকারী কবিতার মাধ্যমে গাজার শিশুদের জন্য লিখেছেন-
‘গাজার শিশুরা, যুদ্ধের মাটিতে নির্দোষ শিশু,
কষ্ট ও পাপের বোঝা নিয়ে তাদের হাসি অন্ধকারে আটকা,
চোখে পুরোনো ব্যথা আর কান্না জমে,
আকাশে শুধু ধোঁয়া আর আগুনের ছটা,
মাটির কোলে থেকে গেছে তাদের খেলার স্মৃতি,
তবুও বিশ্ব চোখ বুজে নীরব,
নিঃশব্দে চিৎকার করছে গাজার শিশুরা...’
মূলত এ ঘটনা এবং এ নিয়ে মন্তব্যগুলো বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একই সঙ্গে দখলদার ইসরাইলি শাসনের ক্রমাগত নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপের দাবি উঠছে।