শপথ না নিয়েই নিজেকে মেয়র দাবি করা বিএনপি ইশরাক হোসেন নগর ভবনে বৈঠক করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৭০ জন ওয়ার্ড সচিব এবং ১০ প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্মকর্তারা এই বৈঠক অংশ নেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের নিচতলায় একটি মিলনায়তনে সভা করেন। সভার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’
জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের ‘নির্দেশনা’ দিয়েছেন ইশরাক। এ ছাড়া কাউন্সিলরদের কার্যালয় থেকে নাগরিকেরা যেসব সেবা পেতেন, সেসব সেবা এই কমিটির মাধ্যমে দিতে বলেছেন তিনি।
একই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডের সচিবদের নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি নাগরিক সেবা তথা জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শপথ না নিয়ে আইনকানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইশরাক হোসেন যেভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গায়ের জোরে এভাবে নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে নগর ভবনে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গত সোমবার থেকে তিনি ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ শুরু করেছেন। সেদিন নগর ভবন মিলনায়তনে প্রায় ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনা হলেও গতকাল ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি।
নগর ভবন সূত্র বলছে, আজ বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ইশরাক।
পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
এদিকে নগর ভবন দখল করে সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই ইশরাক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শপথ না নিয়ে নগর ভবনে বৈঠক করে বিভিন্ন বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত এবং উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে অচলাবস্থার সমাধান হওয়া উচিত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তরুণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইশরাক হোসেনেরও বোধোদয় হওয়া উচিত।