ইরান-ইসরাইল সংঘাত: যুদ্ধের বাটনে এআই

প্রকাশিতঃ জুন ২৩, ২০২৫ | ৭:৩২ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ছায়া যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে, বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো মুহূর্তে তা সর্বাত্মক রূপ নিতে পারে। আর এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভীতিকর প্রশ্নটি হলো – যদি এই সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে মোড় নেয়, তবে সেই ভয়াবহ পরিণতির সিদ্ধান্ত কি মানুষের হাতে থাকবে, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হবে বিশ্ব? ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতার মূল কারণ হলো ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি এবং ইসরায়েলের আঞ্চলিক আধিপত্যের আকাঙ্ক্ষা। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ছায়াযুদ্ধের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনো বড় আকারের সামরিক সংঘাত শুরু হয়, তবে তা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে এবং উভয় দেশ নিজেদের অস্তিত্বের হুমকিতে অনুভব করে, তবে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরমাণু অস্ত্রের কথা স্বীকার করে না, তবে আন্তর্জাতিক মহলে এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে, ইরানও তাদের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। আধুনিক যুদ্ধ ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। নজরদারি থেকে শুরু করে সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও এআইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এআইয়ের ভূমিকা কী হতে পারে? সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া কোনোভাবে এআইয়ের হাতে চলে যায়, তবে তা এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এআই হয়তো দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কিন্তু মানবিক বিবেচনা, ভুল অনুধাবন বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা তার নাও থাকতে পারে। অ্যালগরিদমের ত্রুটি, হ্যাকিং বা অন্য কোনো কারণে যদি এআই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, তবে তার পরিণতি হতে পারে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম পারমাণবিক যুদ্ধ। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ শুধু এই দুটি দেশের জন্যই ধ্বংসাত্মক হবে না, বরং এর প্রভাব পুরো বিশ্বজুড়ে পড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ধাক্কা সামলাতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সতর্ক হতে হবে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার পাশাপাশি সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারের নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। পারমাণবিক যুদ্ধের মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই এআইয়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। মানুষের ভুল সিদ্ধান্তের ফল হয়তো সীমিত হতে পারে, কিন্তু এআইয়ের একটি ভুল সিদ্ধান্ত পুরো মানবজাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাই, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের বিপদ এবং সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ঝুঁকি বিবেচনা করে এখনই বিশ্বনেতাদের সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে এবং প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারের হাত থেকে মানবতাকে রক্ষা করতে আর কোনো বিলম্ব করা উচিত নয়।