ইসরায়েল যে খেলা খেলল

প্রকাশিতঃ জুন ২৬, ২০২৫ | ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইসরায়েল কয়েক যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে ষড়যন্ত্রের এক নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। শেষ পর্যন্ত এবার তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইরানে মার্কিন-ইসরায়েল উস্কানির বিপরীতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সেই সাফল্যের প্রতিচ্ছবি। দেড় কোটি ইহুদি আরবের ৩৫ কোটি মুসলমানকে আত্মঘাতী সংঘাতে লেলিয়ে দিল! যেখানে ব্যবহৃত হলো মার্কিন, রাশিয়ান আর চীনা সমরাস্ত্র। ইসরায়েল এবার আরব, ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকাকে তাদের পরিকল্পনামতো পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি টানেন, কিন্তু ইসরায়েল সফলভাবেই মুসলিম উম্মাহকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল যা পেরেছে, বিশ্বের আর কেউ অন্তত মার্কিন পরাশক্তিকে তাদের ঘাড়ে পা রেখে এভাবে আনুগত্যে বাধ্য করতে পারবে কিনা, সন্দেহ আছে। ৩৫ কোটি মুসলমানসহ গোটা বিশ্বের ধুরন্ধর শাসকদের ধুল খাওয়ানো ইসরায়েলই বিশ্ব-শাসক হওয়ার দাবিদার। ধীরে ধীরে আরব বিশ্বের এক প্রান্তে ঠাঁই নেওয়া, এর পর অঞ্চলজুড়ে ফ্যাসাদের বিষ ছড়ানো। আত্মসংঘাতে বিধ্বস্ত আরবের বুকে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের পথে বাধা থাকল কই আর! এ কাজে তাদের সহায়তার জন্য ব্রিটেনের মতো রাজতন্ত্র বা নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত, সভ্য সমাজচ্যুত বর্বর অপরাধীদের উত্তরসূরি আমেরিকার মতো রাষ্ট্র যে তেল-পানির লোভে জিভ দুলিয়ে আসবে, তা তারা ভালোই জানত। তবে ইসরায়েলের আরব দখলের দুঃস্বপ্ন দেখার ধৃষ্টতায় মূল রসদ জুগিয়েছে আরবের মুসলমানরাই। তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরব বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা যাচাইয়ের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা ছিল সম্ভবত ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিন দখলে নিয়ে সভ্য পৃথিবীর অন্যতম বর্বরোচিত গণহত্যা চালানো হয়। বিপরীতে সৌদি, কাতার, আমিরাত, ইসরায়েলের সদর দরজার বিশ্বস্ত প্রহরী জর্ডান, মিসরসহ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর নীরবতায় তাদের উপেক্ষিত ইসলামী সত্তা ও ভণ্ড মুসলমানিত্ব নিশ্চিত হয়। আগাতে থাকে ইসরায়েল। এর বাইরে যারা হুমকি ছিল সেই গাদ্দাফি, সাদ্দাম, আরাফাতকে হত্যা করে তাদের দেশে পুতুল সরকার বসানোর কাজ, নাগাসাকিতে যিশুর শিরশ্ছেদকারী মার্কিনিরাই করে দিয়েছে। সর্ববৃহৎ হুমকির আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে এমন দুটি রাষ্ট্রের একটি তুরস্ক, ন্যাটোর রুটি মুখে মার্কিন দাসত্বে আনুগত্য প্রকাশ নিশ্চিত করে। বাকি ছিল শুধু ইরান। যাদের দীর্ঘ সময় ধরে শিয়া-সুন্নি বিতর্কে কট্টর ধর্মান্ধ বানিয়ে রাখা হয়। আর এখন মোক্ষম সময়ে যুদ্ধে টেনে এনে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে দেওয়া হলো। এ কাজে ইসরায়েলিদের সহায়ক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরান যে কোণঠাসা হওয়ার নয়– তা বুঝতে পেরে মরিয়া হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু। বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে ডোনাল্ড ট্রাম্পও যেভাবে নেতানিয়াহুর পক্ষে খেলে দেন, তা ছিল বিস্ময়কর। চালবাজির ট্রাম্প কার্ড আছড়ে পড়ে ইরানে। ভাগ্য ভালো, ট্রাম্প পরিস্থিতি বুঝতে পেরে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটেন। তা না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারত। চালচুলোহীন একটি গোষ্ঠী একযোগে গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ভূরাজনীতির সবচেয়ে ঘৃণ্য খেলা খেলল। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশের ঘাড়ে পা রেখে আরব দখলের পথ উন্মুক্ত করল। আরবদের হাতে তাদের সর্বশেষ রক্ষকের গলা কাটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করল। ইরানকে ধ্বংস নয়, শুধু সেখানে আমেরিকাকে দিয়ে হামলাটা করানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। আর তাই হামলার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া না জেনেই আনন্দে উন্মাদ হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু। কারণ তাঁর তুরুপের তাস বাজি মারার পথে। ইসরায়েল ভাঙা কুঁড়ে থেকে ‘রেডি ফ্ল্যাট’-এর মতো প্রস্তুত করা অভিজাত আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পথে। তবে সেটাকে যেন তাদের যাত্রার সমাপ্তি ভেবে কেউ ভুল না করে। সেটা যাত্রাবিরতি মাত্র।