রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে পড়ে একটি রাজনীতিকরণকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আতঙ্কজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যা তারা ইরানে হামলা চালানোর অজুহাত হিসেবে ইসরাইলের হাতে তুলে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ এ কথা বলেন।খবর বার্তা সংস্থা মেহের-এর।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সংস্থাটির এই ইচ্ছাকৃতভাবে আতঙ্ক ছড়ানো ভাষায় তৈরি প্রতিবেদনটি ইসরাইলকে হামলার জন্য অতিরিক্ত কারণ দিয়েছে। আইএইএ-র অভিযোগকে তারা এই হামলার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছে।’
উল্লেখ্য, আইএইএ-এর বোর্ড অব গভর্নরস গত ১২ জুন একটি ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাস করে—যা ছিল ইরানের বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে সামরিক আগ্রাসন শুরুর ঠিক একদিন আগের ঘটনা । তারা দাবি করে, ইরান নাকি তার পারমাণবিক দায়িত্ব ভঙ্গ করেছে।
ল্যাভরভ জোর দাবি করে বলেন, ওই প্রস্তাবটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের মুখে তৈরি হয়েছিল এবং তা গড়ে উঠেছিল আইএইএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি’র প্রতিবেদনের ‘অনুল্লেখিত তথ্য’ বা ‘ইচ্ছাকৃত ইঙ্গিতপূর্ণতা’র ওপর ভিত্তি করে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনের ভাষায় অনেক অস্পষ্টতা ছিল, যেটাকে এই চারটি পশ্চিমা দেশ তৎক্ষণাৎ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।’
এর আগের এক বক্তব্যে ল্যাভরভ বলেন, ইউরোপীয় নেতারা আইএইএ-এর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে, যাতে তারা ইরান সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন দেয়। ফলে ইসরাইলের এই আগ্রাসনের দায় তাদেরও একাংশে বর্তায়।
তিনি এটিকে ‘খাঁটি নব্য-ঔপনিবেশিক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র আইএইএ-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আদায় করতে চেয়েছে।
এছাড়া ল্যাভরভ সতর্ক করেন যে, যদি আইএইএ-কে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে সেই সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ বর্তমানে গোপনীয়তা রক্ষার সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই।
অন্যদিকে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আগ্রাসনের কোনো নিন্দা করেননি। যা ইরানি কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনার কারণ হয়েছে।
তেহরান অভিযোগ করেছে, গ্রোসি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার ব্যাপারে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নীরবতা পালন করছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আইএইএ-এর একাধিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ।’