তিন দিনে হাজার ছাড়াল ডেঙ্গুরোগী ভর্তি

প্রকাশিতঃ জুলাই ৪, ২০২৫ | ৭:০২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছেই। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে টানা তিন দিন মৃত্যু হলো। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৩৫৮ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনেই ভর্তির সংখ্যা হাজার (১১৬০) ছাড়াল। এর মধ্যে বুধবার ভর্তি হয়েছিলেন ৪১৬ জন। যেটি এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড। এ বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৪৫৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তি বরিশাল বিভাগীয় এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে, ১৫০ জন। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৮ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন এবং সিলেট বিভাগে দুজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ৩২৯ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৫১ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৯৭৮ জন। ডেঙ্গু শনাক্তে ১৯ হাজার কম্বো কিট দিল চীন : এদিকে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন সরকারের পক্ষ থেকে ১৯ হাজার কম্বো কিট দেওয়া হয়েছে। আরও কার্যকরভাবে ডেঙ্গু শনাক্তে সক্ষম এসব কিটে এক সঙ্গে এনএস-১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করা যাবে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এসব কিট হস্তান্তর করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের ডেপুটি মিশন চিফ লিউ ইউইন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ও ডায়াগনস্টিক কিট পাঠানোসহ সবধরনের সহযোগিতা অতিদ্রুত পাঠাচ্ছে। এমনকি আজকে চীন সরকার যে ডেঙ্গু কিট দিল সেটিও তারই অংশ। স্বাস্থ্যের বিশেষ সহকারী বলেন, ডেঙ্গুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রোগ্রাম। প্রাথমিক এই শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম যখন ব্যর্থ হতে থাকে অথবা মৌসুম পরিবর্তন হয় তখন হাসপাতালে রোগী বেড়ে যায়। এজন্য যে উৎসগুলোর কারণে এই পরিস্থিতি হচ্ছে সেখানে নজর দিতে হবে। যার যার দায়িত্ব সে পালন করলে শুধু চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ পোহাতে হবে না। বিশেষ সহকারী বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ চারটি ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যার কারণে অনেকে সাধারণ রোগ ভেবে বাসায় থাকছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জটিল করে দিচ্ছে। আমরা মনে করি, শনাক্তকরণ কিট যথেষ্ট আছে, তারপরও সংকটের কিছু থাকলে আমরা সংগ্রহের ব্যবস্থা করছি। তবে সবার আগে দরকার মানুষের সচেতনতা, উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া। ইতোমধ্যে আমরা রাজধানীর মুগদা হাসপাতালসহ বেশকিছু হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। রোগী বেড়ে গেলে হয়তো কিছুটা কঠিন হবে, তবে যেসব নির্দেশনা সাধারণ মানুষকে পালনের জন্য দেওয়া হয়েছে, তা করতে পারলে রোগী ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।’ সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ে স্বাস্থ্য খাত কখনো অগ্রাধিকারে ছিল না, কখনোই পাঁচে স্থান পায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্যকে সবজায়গায় গুরুত্ব দিচ্ছে। সেটি শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, আন্তর্জাতিক যেকোনো পর্যায়ের আলোচনায় হচ্ছে। তার অংশ হিসাবে চীন সরকার ডেঙ্গুর কিট দিয়েছে। এটি সহযোগিতার ছোট্ট একটা অংশমাত্র। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও দৃশ্যমান হবে। এটি শুধু কতকগুলো কিট, ভ্যাকসিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, স্বাস্থ্যব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য যে অবকাঠামো ও নীতিগত সম্প্রাসারণ দরকার, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এগুলো অল্প সময়ে দৃশ্যমান হয় না। তাদের সঙ্গে বড় ধরনের হাসপাতাল, ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইক্যুইপমেস্ট প্ল্যান, ভ্যাকসিন সক্ষমতা গড়ে তোলা, রোবটিক্স যন্ত্রসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতার আলোচনা চলমান রয়েছে।