রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিতঃ জুলাই ১২, ২০২৫ | ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের একদফা দাবি এবং ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ১২ জুলাই শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সংসদে আইন পাশ করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান ছাড়া রাজপথ ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। এর মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। একই দিন রাজধানীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রক্টরের অপসারণ এবং হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের অব্যাহতি দিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও বগুড়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সোয়া ৪টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু হয়। এসময় মধুর ক্যান্টিন ও আশপাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিকাল সোয়া ৫টায় শাহবাগে যান। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ চার পাশে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ হয়ে মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেটগামী গণপরিবহণকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ অসুস্থদের বহনকারী যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করেছে। ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও শাহবাগে মিছিল ও সমাবেশে যোগ দেন। শাহবাগে সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দেশে আমাদের আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলা হয়েছে। এর মাঝে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা চাই এই কোটার একটি যৌক্তিক সমাধান হোক। শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে-ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবু সাইদ বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ভাই-বন্ধুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা যৌক্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি কিন্তু পুলিশ সেখানে হামলা করেছে। এর প্রতিবাদেই আমরা সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, সারা দেশে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশ এক সাংবাদিককে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমরা এই হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। এদিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। তারা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। এতে সদরঘাট এলাকার আশপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জুম্ম শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সংকট রয়েছে। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তারা সমান সুযোগ-সুবিধা পান না। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে তাদের শিক্ষা অর্জন করতে হয়। তারা সমাজের অনগ্রসর। তাই সরকারি চাকরিতে তাদের ৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখা যৌক্তিক। এদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, সরকার এখন ভারসাম্যহীন আচরণ করছে। সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে কোটাবিরোধী আন্দোলন দমাতে চায়।