টেক্সাসের বন্যা এলাকা পরিদর্শনে ট্রাম্প, সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই

প্রকাশিতঃ জুলাই ১২, ২০২৫ | ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার টেক্সাসের হিল কান্ট্রি অঞ্চলে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় ও ফেডারেল সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে স্বাধীনতা দিবসের ভোরে আঘাত হানা এ বন্যায় অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। কার কাউন্টি ঘুরে দেখে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে ট্রাম্প টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমের প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা অসাধারণ কাজ করেছেন।’ তবে হঠাৎ করে আঘাত হানা এ বন্যার আগে যথেষ্ট সতর্কবার্তা ও প্রস্তুতির অভাবে এতো প্রাণহানি হয়েছে কি না, তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনসহ স্থানীয় ও রাজ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে। এক সাংবাদিক বন্যাদুর্গতদের দেরিতে সতর্কবার্তা পাওয়ার ক্ষোভের কথা উল্লেখ করলে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি সবাই পরিস্থিতির মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমি জানি না আপনি কে, তবে এমন প্রশ্ন কেবল একজন ‘অত্যন্ত খারাপ মানুষ’ করতে পারে।’ প্রশাসনের ব্যয়ের কাটছাঁটের কারণে জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ এবং ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সক্ষমতা কমে গিয়েছিল কি না, তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বাজেট কাটলেও আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়েনি। ট্রাম্প সাংবাদিকদের ফেমা বন্ধ করে দেওয়ার বা এর অনেক দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করলে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে এড়িয়ে যান, ‘আরেক দিন বলব।’ বন্যার আগে কার কাউন্টি প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে আগাম সতর্কবার্তার ব্যবস্থা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। স্থানীয় বাসিন্দা লরেন্স ওয়াকার (৬৭) বলেন, ‘পানি ৮ ফুট ওঠার পর থেকে ত্রাণ কার্যক্রম ঠিক আছে, কিন্তু আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না।’ রাজ্যের আইনসভা চলতি মাসেই বিশেষ অধিবেশন ডাকবে, যেখানে ত্রাণ তহবিল এবং বন্যা তদন্ত নিয়ে আলোচনা হবে। গভর্নর অ্যাবট দোষী খোঁজার প্রশ্নে বলেন, “এটি হারের দলে থাকা মানুষের শব্দ।” এখনো নিখোঁজ বহু মানুষ শুক্রবারও উদ্ধারকর্মীরা কর্দমাক্ত ধ্বংসাবশেষে নিখোঁজদের খুঁজে চলেছেন। তবে বন্যার দিন থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জুলাই ৪ তারিখে গুডলুপ রিভারে হঠাৎ করে পানি উজিয়ে এসে গাছপালা ও স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্যোগে পরিণত হয়। বন্যার দিন এক ঘণ্টার কম সময়ে এক ফুটের বেশি বৃষ্টি হয়, নদীর উচ্চতা এক ফুট থেকে ৩৪ ফুটে (১০.৪ মিটার) উঠে যায়। কর কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো ১৬০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জন শিশু রয়েছে, যাদের অনেকেই নদীর তীরে শতবর্ষী ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামের একটি গ্রীষ্মকালীন খ্রিস্টান শিবিরের সদস্য ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা জন মোরেনো (৭১) বলেন, ‘সবাই নদীর ধারে থাকতে চায়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ, আমি সেখানে থাকতে চাই না।’ তিনি জানান, সতর্কতা সিস্টেম থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি রোধ সম্ভব হতো কি না, তা নিয়েও তার সন্দেহ রয়েছে। কর্ভিলের একটি গ্যাস স্টেশনের দেয়ালে বড় অক্ষরে লেখা হয়, ‘ট্রাম্পের বিশাল সুন্দর বিল আমাদের জরুরি তহবিল কেটে নিয়েছে।’ গত সপ্তাহে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে পাস হওয়া এবং বন্যার দিনই ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা ‘বড় বাজেট বিল’-এ কর ও ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা ছিল, যা তহবিল কাটছাঁটের জন্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।