অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ কোটি

প্রকাশিতঃ জুলাই ১৩, ২০২৫ | ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে এই ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকায়। এর বেশির ভাগই দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া হলেও বৈদেশিক ঋণের অংশও ক্রমেই বাড়ছে। রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় ঋণনির্ভরতা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। দেশের রাজস্ব আদায়ের হার কম, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার সময় সামনে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সংকট বাড়ছে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ কোটি এবং বিদেশি ঋণ ১০ লাখ ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সরকারি হিসেবে, আগামী দুই অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ আরও প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা বাড়বে। ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে তা হবে ২৬ লাখ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছর শেষে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ বলছে, ঋণের পরিমাণ বাড়লেও তা এখনো সহনীয় সীমায় রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখনই রাজস্ব-জিডিপির হার ৮ শতাংশের ঘরে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেক সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। তখন উচ্চ সুদে, স্বল্প সময়ের ঋণ নিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য শুরুতে অনুমান করা হয়েছিল ২২ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ২১ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া চাপ কমাতে ঋণ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে তা বেড়ে হয় ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশে নামিয়ে আনে। নীতি-বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরগুলোতে এই অনুপাত আরো বাড়বে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হবে ৩৭.৫০%, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে হবে: ৩৭.৬৩%, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৩৭.৭২%। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জিডিপি দাঁড়াবে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। মধ্যমেয়াদী নীতি-বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধেই বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিশোধ হয়েছে ২০২ কোটি ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে হবে ২৬১ কোটি ডলার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৯০ কোটি ডলার, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩১২ কোটি ডলার, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৩৩৪ কোটি ডলার। সুদসহ এই ব্যয় আরও অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। সরকারের মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ ও বৈদেশিক দায়ের কারণে বাংলাদেশ এখন \'মাঝারি ঝুঁকির\' পর্যায়ে অবস্থান করছে। যদিও এখন পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে \'নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ\' বলা হলেও, রাজস্ব সংগ্রহে দুর্বলতা এবং বৈদেশিক পরিশোধের চাপে তা দ্রুত বাড়তে পারে। বিশেষ উদ্বেগের জায়গা বৈদেশিক ঋণ বনাম রপ্তানির অনুপাত। এখন এ অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৪০ শতাংশে, যা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনো ঋণঝুঁকির দিক থেকে নিরাপদ বলেই ধরা হয়, তবে ঋণের গতি ও পরিশোধ সক্ষমতা বিবেচনায় এই ধারাটি আর অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হলে এবং রপ্তানির প্রবৃদ্ধি স্থবির হলে ঋণ ব্যবস্থাপনায় চাপ আরো বাড়বে। আগামী সরকারের জন্য তাই প্রথম চ্যালেঞ্জই হতে পারে ঋণ ব্যবস্থাপনার ভারসাম্য রক্ষা করা। এখনই প্রয়োজন রাজস্ব বাড়ানো, অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয় এবং দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল। না হলে, উন্নয়ন অভিযাত্রা থমকে যেতে পারে ঋণের ভারেই।