আগের ম্যাচে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই হিসেবনিকেশ প্রায় শেষ করে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ১৫৫ রানের লক্ষ্যে নেমে এমনই ঝড় শুরু করেছিল যে, ৬ ওভারেই তুলে ফেলে ৮৩ রান! ৯ ওভারে হয়ে যায় তাদের দলীয় সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১৯তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে জয়টা পেয়েছিল লঙ্কানরা।
ডাম্বুলায় আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও জয়-হারের সম্ভাবনার সব হিসেবনিকেশ যেন শ্রীলঙ্কান ইনিংসে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই শেষ! ১৩ ইনিংস পর ফিফটির মুখ দেখা লিটন দাসের ৫০ বলে ৭৬ আর শামীম পাটওয়ারির ২৭ বলে ৪৮ রানের সৌজন্যে আগে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশ তুলেছে ১৭৭ রান, জবাবে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট নেই! রান পেয়েছে মাত্র ৩৭।
মাঝে পঞ্চম উইকেটে ৪১ রানের একটা জুটি হলেও দশম ওভারের পর আবার ধস লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপে। ১২ রানের মধ্যে আরও ৪ লঙ্কান উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। জয়-হারের হিসাব তো তখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। বরং রেকর্ড বইয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেল, রানের হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের হাতছানি যে তখন সামনে!
শেষ পর্যন্ত অবশ্য রেকর্ডটা হতে হতেও ঠিক হলো না। ২০২১ বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৮৪ রানের জয়ের রেকর্ডটাই থেকে গেল বাংলাদেশের রানের হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বড় জয়। তবে ‘আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে’ শর্তটা যোগ করলে আবার ডাম্বুলার এই জয়ই বিশেষ হয়ে যায়। এর আগে গত ডিসেম্বরে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮০ রানের জয়ই ছিল টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়, শ্রীলঙ্কাকে ৯৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে আজ সেই রেকর্ড নতুন করে লিখল বাংলাদেশ। ৮৩ রানের এই জয়ে সিরিজেও ফেরাল সমতা। আগামী বুধবার কলম্বোতে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি হয়ে গেল সিরিজনির্ধারণী।
শ্রীলঙ্কা শুরুটা যেভাবে করেছিল, তাতে অবশ্য প্রথম ম্যাচের মতোই কিছু হওয়ার শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল। শরীফুলের প্রথম ওভারে কুশাল মেন্ডিসের এক চারে ৮ রান, এরপর সাইফউদ্দিনের প্রথম চার বলেই পাতুম নিশাঙ্কার এক ছক্কার পর মেন্ডিসের এক চারে ১১ হয়ে গেল! তবে পঞ্চম বলে ছন্দপতন। শামীমের দারুণ ফিল্ডিংয়ে উইকেট বাংলাদেশের। পয়েন্টে বল রেখেই দ্রুত এক রান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কুশাল, কিন্তু দৌড়ে এসে বল ধরেই ডিরেক্ট হিটে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেন শামীম। রানআউট কুশাল (৮)।
সেখান থেকেই হঠাৎ ধসের শুরু। লঙ্কান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই-ই ফর্মে থাকা, তাদের এভাবে দ্রুত ফেরাতে পারবেন বাংলাদেশের বোলাররা, তা কজন ভেবেছিলেন! তবে স্লোয়ারের দারুণ ব্যবহারে সেটিই সম্ভব করে দেখালেন শরীফুল-সাইফউদ্দিনরা।
তৃতীয় ওভারে শরীফুলের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন কুশাল পেরেরা (০)। মাঝে একটি জোরাল শটে ক্যাচ হাতছাড়া হলেও পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে আভিষ্কা ফার্নান্দো স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে শামীমের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরলেন শরীফুলেরই বলে। পরের ওভারের প্রথম বলে লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাকে উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচ বানালেন সাইফউদ্দিন। উইকেটটা অবশ্য এসেছে রিভিউয়ের পর। লিটনের হাতে যাওয়ার পথে বলটা আসালাঙ্কার ব্যাটে লেগেছিল, নাকি আসালাঙ্কার ব্যাট মাটিতে লেগেছিল এ নিয়ে শঙ্কা ছিল। রিভিউয়ে উত্তর এসেছে – ক্যাচ! চোখের পলকে ৩০ রানে ৪ উইকেট নেই শ্রীলঙ্কার! তখনো পাওয়ার প্লে-র ৫ বল বাকি!
সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে নিশাঙ্কা ৪১ রানের জুটি গড়েছেন দাসুন শানাকার সঙ্গে। লঙ্কান ইনিংসে দুই অঙ্কের রান শুধু এ দুজনেরই। জুটিটা দশম ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৭০ রানের ঘরেও পৌঁছে দিয়েছে। তবে ১১তম ওভারে রিশাদ এসে ভাঙলেন সে জুটি। এগিয়ে এসে মারতে চেয়েছিলেন নিশাঙ্কা (৩২), তবে রিশাদের বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারি তাঁকে ফাঁকি দিল। বল গেল লিটনের হাতে। লিটন যখন স্টাম্পড করছেন, নিশাঙ্কা ক্রিজের দিকে ফেরার চেষ্টায়ও আর কোনো কারণ দেখলেন না!
জুটিটা ভাঙতেই আবার ধস লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপে। দুই বল পর চামিকা করুনারত্নে ক্যাচ তুলে দিলেন রিশাদেরই হাতে, বলটার গতি যেন বুঝতেই পারেননি। পরের ওভারের প্রথম বলে ক্রিজে টিকে থাকা শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মারার চেষ্টা করতে গিয়ে মিরাজের বলটাকে ডিপ মিডউইকেটে তানজিদ তামিমের হাতে জমাই শুধু দিতে পারলেন। শানাকা ফিরলেন ২০ রান করে, শ্রীলঙ্কার রান তখন ৭ উইকেটে ৭৩।
রেকর্ডের বইতে তখন চোখ রাখার দায় পড়ে গেল। তখনো যে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের শিকার না হতে শ্রীলঙ্কার ২০ রান দরকার! পরের ওভারের পঞ্চম বলে জেফরি ভ্যান্ডারসেইও যখন সাইফউদ্দিনকে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন, রেকর্ডটার সম্ভাবনা আরও বাড়ল। শ্রীলঙ্কার রান তখনো ৮৩।
কিন্তু মহীশ তিকসানা ও বিনুরা ফার্নান্দোর ৬টি করে রানের দুই ইনিংস বাংলাদেশের রেকর্ডা আর হতে দিল না। ১৫তম ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিকসানা ফিরলেন, শ্রীলঙ্কা আর রান করতে না পারলে তখনো যৌথভাবে রেকর্ডটা হয় বাংলাদেশের। কিন্তু পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে রিশাদের বলে বিনুরা স্টাম্পড হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা আরও একটি রান পেয়ে গেল।
এক রানের জন্য রেকর্ডটা হলো না বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেরিয়ে পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের নতুন রেকর্ড অবশ্য ঠিকই হলো।
দারুণ এমন জয়ের পথে বাংলাদেশের বোলারদের সবাই-ই দারুণ দেখিয়েছেন। রিশাদের ৩.২ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট ম্যাচে দুই দল মিলিয়েই সেরা বোলিং। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও শরীফুল। মোস্তাফিজ আর মিরাজ নিয়েছেন একটি করে। শরীফুল আর মোস্তাফিজের ইকোনমিও ৫-এর নিচে, রিশাদের ৬-এর নিচে।