কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এই কমপ্লেক্সের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার বা রিফাইনারি নির্মাণ করা হবে। বছরে তেল শোধনের ক্ষমতা হবে ১৫-২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এ ছাড়া জ্বালানি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারিগরি ব্যবস্থা রাখা হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং আমদানি করা পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) অঞ্চলে এ কমপ্লেক্সটি করা হবে। প্রকল্প প্রস্তাবটি এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন কবেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, মাতারবাড়ীতে পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত প্রকল্প। প্রস্তাবিত পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সটির বার্ষিক ১৫-২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা থাকবে। প্রাথমিকভাবে আমরা বছরে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন পরিশোধন করার বিষয়ে চিন্তা করছি। তিনি জানান, এরই মধ্যে কমপ্লেক্সের জন্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। আগ্রহী বিনিয়োগকারীও আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পটিকে দেশের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আমদানি ব্যয় কমাতে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর বিপরীতে বর্তমানে দেশের জ্বালানি তেল মজুতের ক্ষমতা প্রায় ১ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা দেশের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদার সমান। এ ছাড়া সরকার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ইউনিট-২ চালু করার জন্যও কাজ করছে। ইআরএল-২ প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে তিন মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করা হবে।
জানা গেছে, মাতারবাড়ীর এমআইডিআই জোনে ৪০৪.৭৬ হেক্টর জমি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই এলাকায় বেশ কয়েকটি জ্বালানি সম্পর্কিত অবকাঠামো প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, একটি এলপিজি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে চ্যানেল সম্প্রসারণের কাজ।
চ্যানেল সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দের পর, এলএনজি এবং এলপিজি টার্মিনালের জন্য ৯২ দশমিক ৮৪ হেক্টর (২২৯.৪১ একর) জমি অবশিষ্ট আছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ মাতারবাড়ী আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দকৃত জমির একটি অংশ নতুন কমপ্লেক্সের জন্য ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত জায়গাটি সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) পাইপলাইন সংলগ্ন। ফলে এসপিএমের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল সরাসরি খালাস করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে এই প্রস্তাব নিয়ে গত ১৯ জুন এবং ৩ জুলাই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাইকা প্রকল্পটি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। প্রস্তাবিত স্থানটি জ্বালানি শিল্প জোনের প্লট ২৫, ৩০, ৩১ এবং ৩২-এ অবস্থিত, যা এলএনজি/এলপিজি টার্মিনাল এলাকার পাশে।
বর্তমানে, বিপিসি বছরে মাত্র ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে। যেখানে দেশের চাহিদা ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। এই চাহিদা ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং ২০৪০-৪১ অর্থবছরের মধ্যে ১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নতি হবে বলে ধারণা করছে বিপিসি।