যুদ্ধবিরতিতে আস্থা নেই, নতুন করে প্রস্তুত ইরান

প্রকাশিতঃ জুলাই ১৫, ২০২৫ | ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ জানিয়েছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কোনো যুদ্ধ ছড়াতে চায় না, তবে যে কোনো নতুন আগ্রাসনের মুখে কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইরান যুদ্ধবিরতিতে পুরোপুরি আস্থা রাখে না, তাই সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।’ সোমবার (১৪ জুলাই) তিনি তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক ফোনালাপে এ মন্তব্য করেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলারকে তিনি বলেন, আমরা চাই না এই অঞ্চলে যুদ্ধ বা অস্থিরতা ছড়াক, তবে যদি কেউ আগ্রাসন চালায়, তাহলে আমরা শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া জানাব। তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সন্তুষ্ট এবং মনে করেন পারমাণবিক আলোচনা একটি যুক্তিসংগত ও ইরান এবং অঞ্চলের জন্য লাভজনক চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া উচিত। মালয়েশিয়ার সমর্থন ও ইরান-মালয় সম্পর্ক মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালেদ নোরদিনের সঙ্গে আলাপকালে নাসিরজাদেহ মালয়েশিয়ার ইরানের প্রতি সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চাপের মুখে মালয়েশিয়া যেভাবে আমাদের পাশে থেকেছে, আমরা তা গভীরভাবে স্মরণ করি। উত্তরে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, ইরান আমাদের বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার। আমরা ইসরায়েলকেই যুদ্ধের জন্য দায়ী করি এবং তাই শুরু থেকেই এই আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ইরানি জনগণ ও সেনাবাহিনী যে ঐক্য ও সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, ইসরায়েল তার কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না, কারণ তারা যা বলছে, তা নিছক কল্পনা। কূটনীতির জানালা এখনো খোলা ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান এখনো বিশ্বাস করে যে, কূটনৈতিক পথের জানালা খোলা রয়েছে এবং এই পথেই এগিয়ে যেতে দেশটি সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সম্পদ ব্যবহার করবে। সোমবার (১৪ জুলাই) প্রবাসী ইরানিদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, আমরা কূটনীতি ও গঠনমূলক পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে এবং যুদ্ধের বিপক্ষে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে যুদ্ধের ছায়া দূর করতে আমরা সব ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পদ ব্যবহার করব—একই সঙ্গে ইরানি জনগণের প্রাকৃতিক অধিকার রক্ষা করব। পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ইরান কখনো যুদ্ধ চায়নি; বরং বিশ্বব্যাপী টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখাই ছিল দেশটির লক্ষ্য। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরানি জনগণ শান্তি চায়, কিন্তু তারা কখনোই আত্মসমর্পণকারী জাতি নয়। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলাম, তখনই ইসরায়েলি শত্রু আমাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি জানান, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে এবং নতুন আলোচনা শুরুর প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। এমন সময় ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ইরানে হামলা চালিয়ে ইরানি সেনা কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং নিরীহ নারী-শিশুসহ বহু নাগরিককে হত্যা করে। পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা বহুবার জানিয়েছি, আমাদের পরমাণু নীতি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, যখনই ইরান স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে এগোতে চায়, তখনই ইসরায়েল তা বানচাল করার চেষ্টা করে। তিনি আরও বলেন, ইরানের ১২ দিনের প্রতিরোধযুদ্ধ ছিল জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি বৈধ আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। যুদ্ধবিরতিতে আস্থা নেই, নতুন করে প্রস্তুত ইরান যে কোনো ভুল পদক্ষেপে কড়া জবাব দেবে ইরান ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুররহিম মুসাভি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো ভুল পদক্ষেপ বা অপকৌশল হলে দেশটি শক্তিশালী ও কঠোর জবাব দেবে। সোমবার (১৪ জুলাই) ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্সের সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে মুসাভি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি শত্রু আবারও কোনো ভুল করে, তবে আমাদের সাহসী সেনারা এমন জবাব দেবে, যা তাদের অনুতপ্ত করবে। তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ ধরনের দক্ষ ও প্রস্তুত সেনাবাহিনী থাকা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। যতদিন এই বীর সৈন্যরা আছে, ততদিন কেউ ইরানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করে নিরবচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র উৎপাদন ও প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যেন যে কোনো আক্রমণের মুখে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র রিপোর্ট আইআরজিসি’র অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ মুসাভি এ সময় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’-র একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে ইরানের সামরিক প্রস্তুতি ও কৌশলগত সক্ষমতার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, আমাদের সেনারা সর্বদা প্রস্তুত, ট্রিগারে আঙুল রাখা আছে। শত্রুর যে কোনো উসকানি, ভুল হিসাব বা আগ্রাসনের প্রচেষ্টায় তারা তাৎক্ষণিক জবাব দিতে সক্ষম। মুসাভি আরও যোগ করেন, ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় কখনো পিছু হটবে না এবং শত্রুকে কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যুদ্ধবিরতিতে আস্থা নেই, নতুন করে প্রস্তুত ইরান ইসলামী ঐক্য নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের বার্তা অন্যদিকে, মাসউদ পেজেশকিয়ান সোমবার (১৪ জুলাই) পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, ইসরায়েল মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল ও বিভক্ত করতে চায়। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। তিনি বলেন, মুসলিম নেতাদের এখন ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে এবং ইসলামী ঐক্যকে জোরদার করতে হবে। তিনি ইরান-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা ব্যক্ত করেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও সমর্থন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকভি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের শুভেচ্ছা জানান এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধকে ‘ইসলামী উম্মাহর গর্ব’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব এবং আপনার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিই এই বিজয়ের মূল ভিত্তি। নাকভি আরও বলেন, ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক বিশেষ এবং ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে। উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই সম্পর্ক আরও গভীর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তথ্যসূত্র : মেহের নিউজ এজেন্সি