ট্রাম্পের প্রশংসার পর মিয়ানমারের জান্তা-ঘনিষ্ঠদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

প্রকাশিতঃ জুলাই ২৬, ২০২৫ | ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করার এবং শুল্ক হ্রাসের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠানোর দুই সপ্তাহ পর এমন সিদ্ধান্ত নিলো দেশটি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা তালিকা থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন—কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতা জোনাথন মায়ো কিয়াও থাং, এমসিএম গ্রুপ ও এর মালিক আউং হ্লাইং উ, সানট্যাক টেকনোলজিস ও এর মালিক সিট তাইং আউং এবং টিন ল্যাট মিন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে বাইডেন প্রশাসন কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস এবং এর প্রতিষ্ঠাতাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। একই বছর মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা খাতে সক্রিয় থাকার কারণে সিট তাইং আউং এবং আউং হ্লাইং উ’র ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সামরিক শাসকদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত টিন ল্যাট মিনকে ২০২৪ সালে অভ্যুত্থানের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেনি ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এবং হোয়াইট হাউসও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এ সিদ্ধান্তকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত রয়েছে। গত ১১ জুলাই মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মিন অং হ্লাইং এক চিঠিতে ট্রাম্পকে ৪০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর আহ্বান জানান এবং প্রয়োজন হলে একটি আলোচক দল ওয়াশিংটনে পাঠাতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে মিয়ানমারের জন্য নতুন শুল্কহার নির্ধারণ করে চিঠি পাঠায় ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির জবাবে মিন অং হ্লেইং ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক কমিয়ে ০ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি আরও অনুরোধ করেন ট্রাম্প যেন মিয়ানমারের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বিবেচনা করেন, কারণ সেগুলো উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ ও সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিরল খনিজ সরবরাহকারী দেশ। এই খনিজগুলো উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক ও ভোক্তা পণ্যে ব্যবহৃত হয়। চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় থাকা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই খনিজের নিরাপদ উৎস নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে মিয়ানমারের অধিকাংশ বিরল খনিজ খনি কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবস্থিত, যারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এসব খনিজ প্রক্রিয়াজাত করা হয় চীনে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত রীতিমতো বিস্ময়কর এবং এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি ইঙ্গিত করছে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে, যেখানে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতকারী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছিল।’ সিফটন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ভুক্তভোগী মানুষ এবং যারা গণতান্ত্রিক শাসন ফেরাতে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠবে।’