বাংলা বলায় আধার কার্ডধারী ভারতীয় যুবককে পাঠানো হলো বাংলাদেশে

প্রকাশিতঃ জুলাই ২৬, ২০২৫ | ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ একজন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়। রাজস্থানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন মালদার কালিয়াচকের ২১ বছর বয়সি যুবক আমির শেখ। পরিবারের দাবি, বৈধ ভোটার আইডি ও আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে রাজস্থান পুলিশ এবং দুই মাস ধরে জেল হেফাজতে রাখে। সবচেয়ে বিস্ময়করভাবে, আদালতের কোনো রায় ছাড়াই তাকে বিএসএফের সহায়তায় সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার বাংলাদেশের এক অজ্ঞাতনামা এলাকা থেকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে আমির শেখকে দেখা যায় কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমি ভারতীয়। আমাকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দিন।’ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই জালালপুরসহ মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় শোক ও ক্ষোভের আবহ তৈরি হয়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জীবিকার খোঁজে তিন মাস আগে রাজস্থানে গিয়েছিলেন আমির। সেখানেই দুই মাস আগে স্থানীয় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরিবারের দাবি, একাধিক ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাকে বিদেশি তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আমিরের বাবা জেমস শেখ বলেন, ‘ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি, ও আমার ছেলে। ওর সব বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। তবু যদি ভারতীয় নাগরিকদের এভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’ এ ঘটনা ঘিরে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। আজ আমিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক আসিফ ফারুক। তিনি বলেন, ‘এটা কেবল একটি পরিবারের নয়, গোটা বাংলার অপমান। এ ঘটনা নিছক প্রশাসনিক ভুল নয়, এটা একটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ জেলা প্রশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখায়, কীভাবে ভাষা, ধর্ম ও অভিবাসন-পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বিদ্বেষমূলক আচরণ এখন উদ্বেগজনক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা শুধুই পশ্চিমবঙ্গের কোনো স্থানীয় ঘটনা নয় বরং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা, নাগরিক অধিকার এবং অভ্যন্তরীণ সংহতির প্রতি এক ভয়াবহ সংকেত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ এবং এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখন সময়ের দাবি।