অটোমেশন বাতিল চান বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকরা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ | ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এবার অন্তত পাঁচশ শিক্ষার্থী ভর্তি হননি। এতে আয় কমে যাওয়ায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পেয়ে হতাশ হচ্ছে বলেও দাবি করছেন তারা। মালিকরা বলছেন, তিন বছর আগেও এসব জটিলতা ছিল না। মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পর এ সংকট তৈরি হয়েছে। তারা এ পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। মালিকদের ভাষ্যমতে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেশি শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ ৯ থেকে ৮ এ এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৭ পর্যন্ত শিথিলতা দরকার। সেইসঙ্গে উভয়ের বায়োলজিতে জিপিএ ৪ থেকে সাড়ে ৩ করা হলে আরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এবং ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সহজ করা হলে এ খাত থেকে অন্তত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এরপরও বিদেশি শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে ওইসব আসনে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকতে হবে। এদিকে এসব দাবির সঙ্গে একমত নন নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, চিকিৎসা শিক্ষার সঙ্গে কোনো আপস কিংবা ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কম রেজাল্ট নিয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলে চিকিৎসা শিক্ষার মান আরও তলানিতে ঠেকবে। বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিশ্বের কোথাও মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতি চালু নেই। অটোমেশন প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শেষ হতে সময় লাগে ৩ মাসের বেশি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লেগেছিল ৬ মাস। এখানেই শেষ নয়, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বরাদ্দকৃত আসন পূরণ না হলে দেশি শিক্ষার্থী দিয়ে পূরণ করা যাচ্ছে না। চার-পাঁচবার মাইগ্রেশন করেও আসন পূর্ণ হয় না। অটোমেশনের আগে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সেশনে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীর কোনো আসন ফাঁকা থাকেনি। অটোমেশনের পর ২০২২-২৩ সেশনে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২১৭ আসন ফাঁকা ছিল। বিদেশি শিক্ষার্থীর আসন ফাঁকা ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ সেশনে আসন ফাঁকা ছিল ১৪২টি। বিদেশি শিক্ষার্থী আসন ফাঁকা ছিল ২২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ সেশনে ৪৬৭ আসন ফাঁকা রয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি ২৩ শতাংশ। মালিকদের মতে, নীতিগত জটিলতায় বিদেশি শিক্ষার্থী হারাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ উদ্যোক্তাদের লোকসান থেকে বাঁচাতে হলে অটোমেশন বাতিলসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে নীতিমালা সহজ করা; চলমান ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেশি শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৯ থাকা জরুরি, এ শর্ত বদলে জিপিএ ৮ করা; বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেলায় এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ ৭ করা এবং দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বায়োলজিতে জিপিএ ৪-এর বদলে ৩ দশমিক ৫ করা। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসির গ্যাপ দুই বছর থেকে তিন বছর করারও দাবি জানিয়েছেন মালিকরা। বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, সারা দেশে ৬৭ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সাত মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ২৯৩ আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ আসন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য সংরক্ষিত। সংখ্যার হিসাবে ২ হাজার ৮৩২টি। বিদেশি শিক্ষার্থীর আসন পূর্ণ করা গেলে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। কারণ, একজন শিক্ষার্থী গড়ে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। এক্ষেত্রে সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিলে আয় বাড়বে। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শেখ মহিউদ্দীন বলেন, দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষায় বেসরকারি খাতের অবদান অপরিসীম। সরকার এ খাতের প্রতি নজর না দিয়ে নতুন নতুন নীতিমালা করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অটোমেশন পদ্ধতি ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবান্ধব নয়। অটোমেশনের নামে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এটা মেধাবী শিক্ষার্থীরা পছন্দ করছেন না। দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন তারা। বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষা খাত রক্ষা করতে হলে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন। ডা. শেখ মহিউদ্দীনের বক্তব্যের ভিন্নমত পোষণ করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, অটোমেশনের কারণে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। অনেক কারণের মধ্যে এটা একটা কারণ হতে পারে। আরও অনেক কারণ আছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে ১ হাজার ৩০টি আসন একযোগে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ শিক্ষার্থীরা তো বেসরকারিতে যাচ্ছে না। কিছু কিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের মান খুব খারাপ। বিদেশি স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটা জটিলতা আছে। সেটার সমাধানের জন্য অক্টোবরে একটা টিম আসছে। সেই কারণে বিদেশি ছাত্রদের আসা কিছুটা কমে গেছে। আবার প্রতিবেশী একটা দেশের অনেক শিক্ষার্থী এদেশে এমবিবিএস পড়তে আসত। তাদের সরকার শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির আসন পূর্ণ না হওয়ার পেছনে শুধু অটোমেশন নয়, আরও অনেক কারণ রয়েছে।