মোহামেডানকে উড়িয়ে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ কাপ শিরোপা ধরে রাখল বসুন্ধরা কিংস। গত মৌসুমে শুরু হয়েছিল এ আসর। একই প্রতিপক্ষকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সে আসরের শিরোপা জিতেছিল হালের পরাশক্তিরা।
আগের মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন দল বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ কাপে অংশগ্রহণ করে থাকে। গত মৌসুমে শুরু হওয়া আসরের ফাইনালিস্ট ছিল অভিন্ন দল। কাকতালীয় মিল হচ্ছে, সে ম্যাচের পর আলোচনায় ছিল ভেন্যু, সেটা অপরিবর্তিত থাকল এবারও। গত আসরে বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকদের মাঠে স্মোক বোম্ব নিক্ষেপ করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। গতকাল একই কাণ্ড ঘটালেন মোহামেডান সমর্থকরা, যে কারণে বন্ধ থাকল খেলা।
ফুটবলার ও রেফারি প্রস্তুত—তারপরও ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি। দুপুর আড়াইটায় নির্ধারিত ম্যাচ শুরু হলো ১১ মিনিট পর। এ সময় চলে মাঠ প্রস্তুত করার কাজ। কিক-অফের পরও মাঠের বাইরের অংশে চলে পরিচর্যা, ঘাস কাটা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল হলো বেশ। যারা ট্রল করলেন, তাদের কাতারে ছিলেন আব্দুল বাতেন মজুমদার কোমল ও তকলিছ আহমেদের মতো জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররাও।
অপ্রস্তুত ভেন্যু দেশের ফুটবলের রুগণ চিত্রটা আরেকবার স্পষ্ট করল। পেশাদারি মোড়কে দেশের ফুটবল যে এখনো শৌখিনের কাতারে এটা প্রমাণ করল মৌসুম সূচনার আসর। চাইলেই এমন রুগণ দৃশ্য এড়ানো যেত। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ম্যাচ ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলার; কিন্তু মোহামেডান কর্মকর্তারা রাজি হননি, নিজেদের হোম গ্রাউন্ড কুমিল্লা স্টেডিয়ামেই ম্যাচ খেলেছে গত মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা। অনেকেই ভেন্যুর হাস্যকর অবস্থার কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) দায় দিচ্ছেন। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায় নিতে হবে বাফুফেকে—এটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে দায়টা মোহামেডানেরই বেশি। কারণ মৌসুম শুরুর আগে ভেন্যু প্রস্তুত করতে ক্লাবগুলোকে বারবার তাগিদ দিয়েছে বাফুফে। তাতে কাজের কাজ কী হয়েছে—বোঝা গেল কুমিল্লা স্টেডিয়ামের চিত্র দেখে।
ভেন্যুর করুণ চিত্র বাদ দিয়ে ম্যাচের দিকে দৃষ্টি দিলে সেখানে কিন্তু শুরুর সঙ্গে শেষের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৬ মিনিটে কিংস গোল করে, ১৫ মিনিটে সমতায় আসে মোহামেডান। ৭১ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইনে সমতা ছিল। সোহেল রানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মার্চিং অর্ডার পাওয়ায় দশজনের দলে পরিণত হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। তার পরও মোহামেডানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়ে শিরোপা ধরে রাখল বসুন্ধরা কিংস। ষষ্ঠ মিনিটে সোহেল রানার পাস ধরতে যাওয়া দোরিয়েলতন গোমেজকে বক্সে ফেলে দিয়ে পেনাল্টির বিপদ ডেকে আনেন মোহামেডান অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠু। স্পট-কিক থেকে সুজন হোসেনকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান এ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডই। দ্রুতই মোহামেডান সমতায় ফেরে, গোলের উৎস ছিল পেনাল্টি। মুজাফফর মুজাফফরভের স্পট-কিকে সমতায় আসে সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ঘানার এলি কেকে বক্সের মধ্যে তারিক কাজীর ট্যাকলের শিকার হলে পেনাল্টি পেয়েছিল মোহামেডান।
৭২তম মিনিটে আরেক ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তোর ভলিতে ফের লিড নেয় বসুন্ধরা কিংস। সোহেল রানার কর্নার ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে পারেনি মোহামেডান রক্ষণ, বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের ভলিতে বল জালে জড়ান গত কয়েক মৌসুম আবাহনীতে খেলা রাফায়েল। দোরিয়েলতন গোমেজের পাসে ৭৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৩-১ করেন এমানুয়েল সানডে। ৮৬তম মিনিটে এমানুয়েল সানডের পাস ধরে প্রথমে মেহেদী হাসান মিঠুকে কাটান দোরিয়েলতন গোমেজ, পরে ডজে মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেনকে বোকা বানিয়ে ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠান।