মস্কোতে শুরু ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫ | ৬:৪০ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

রাশিয়ার পরমাণু শিল্পের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কোতে শুরু হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক’। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ শক্তি ব্যবস্থার নিরাপদ ও টেকসই দিক নিয়ে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই আন্তর্জাতিক আয়োজন। এতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তিবিদরা। বৃহস্পতিবার সকালে মস্কোর ভিডিএনএইচ পার্কের হলরুমে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক, রাষ্ট্রপতি দপ্তরের প্রথম উপ-প্রধান এবং রোসাটমের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকো, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। আয়োজনজুড়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ফিউশন প্রযুক্তি নিয়ে বিভিন্ন সেশন ও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আলোচনায় বক্তারা বলেন, শুধু সৌর বা বায়ুশক্তি নয়—নিরাপদ ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার শক্তির একটি বড় ভূমিকা থাকবে। তারা মনে করেন, নিউক্লিয়ার এনার্জি বিদ্যুৎ গ্রিডে স্থিতিশীলতা আনবে, আর নবায়নযোগ্য শক্তি হবে এর পরিপূরক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিউশন এনার্জি যদি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে সেটিই হবে মানবজাতির জন্য সীমাহীন ও নিরাপদ শক্তির ভবিষ্যৎ উৎস। একই সঙ্গে তারা জোর দেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, গবেষণা এবং দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার ওপর। এ ছাড়া ‘স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর’ (এসএমআর) প্রযুক্তি নিয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা বলেন, ছোট শহর, শিল্প এলাকা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে এই প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, নিরাপত্তা বিধান এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। আলোচনায় উঠে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক—একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস নয়, এটি একটি অঞ্চলকে নগরায়ণ, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকেও আমূল বদলে দিতে পারে। ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইকের আন্তর্জাতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘পারমাণবিক নিরাপত্তা রাশিয়ার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—পারমাণবিক স্থাপনাগুলো যেখানেই থাকুক না কেন, সেগুলোর নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউরেনিয়াম উত্তোলন, চুল্লি পরিচালনা, ব্যবহৃত জ্বালানি এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে আরও কঠোর নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।’ পুতিন বলেন, ‘আমাদের এমনভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ—এই দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে।’ তিনি এসব কথা বলেন গতকাল বিকেলে আয়োজিত রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লাইং, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এবং ইরান, উজবেকিস্তান, মিশর, নাইজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিউক্লিয়ার পাওয়ার, নবায়নযোগ্য শক্তি ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বিত পথই হতে পারে টেকসই সমাধান।