নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম এক অধ্যায় \'ভাট কবিতা\' বিষয়ক এক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আয়োজন করে কেন্দুয়ার সাহিত্য অঙ্গনের অন্যতম সংগঠন চর্চা সাহিত্য আড্ডা।
গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ আসরে মধ্যমণি ছিলেন, দেশবরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী কুদ্দুস বয়াতী।আলোচক ছিলেন, ভাট কবিতার লেখক নুরুল ইসলাম, পালা নাট্যকার ও লোকসাহিত্য গবেষক রাখাল বিশ্বাস, কবি, শিল্পী ও লোকসাহিত্য গবেষক আবুল বাসার তালুকদার।
চর্চা সাহিত্য আড্ডার সমন্বয়কারী রহমান জীবনের সঞ্চালনায় আসরে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন চর্চা সাহিত্য আড্ডার উপদেষ্টা গীতিকবি মির্জা রফিকুল হাসান, কেন্দুয়া মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি চারণ সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবে সাবেক সভাপতি দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ মামুন, সাবেক সভাপতি আবুল কাশেক আকন্দ, কবি জহিরুল হক খান, সান্দিকোনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার উদ্দীন হিরন, উদীচীর সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, কবি-সাংবাদিক সালাহউদ্দিন সালাম প্রমূখ।
\'ভাট কবিতা\' নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক নরুল ইসলাম বলেন, ভাট কবিতা কবিতা হল লোককবিতা, যা গ্রামের সাধারণ কবিরা রচনা ও পরিবেশন করতেন। এই কবিতায় রাজা বা সমাজপতিদেরকে স্তুতি করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা, যেমন—যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, সামাজিক অপরাধ, প্রেম-বিরহ ইত্যাদি বিষয় ফুটিয়ে তোলা হতো বিভিন্ন হাট- বাজারে। ভাটরা হাট-বাজারে কিংবা যে কোনো গ্রামীণ মেলায় আসর বসিয়ে বা হেঁটে হেঁটে এসব কবিতা পাঠ করে শোনাতেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে গল্প বা খবরের মতো ছড়িয়ে পড়তো।
নাট্যকার রাখাল বিশ্বাস বলেন, আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে যখন কবিতা মূলত বই বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে, তখন অতীতের হাটে-বাজারে কবিতা পাঠের সেই প্রাণবন্ত পরিবেশ আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছিল। এক সময় বাংলার হাট-বাজারগুলো ছিল শুধু বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, ছিল সংস্কৃতি চর্চারও উর্বর ক্ষেত্র। সেইসব প্রাঙ্গণে কবিরা জমায়েত হতেন, সুরে-ছন্দে কবিতা পাঠ করে মুগ্ধ করতেন সাধারণ মানুষের হৃদয়। শ্রোতারা বাজারে কেনাবেচার ফাঁকে কবিতার মায়াবী সুরে, মুগ্ধ হয়ে শুনতেন ভাট কবিতা, গীতিকবিতা, ছড়া ও আবৃত্তি। এ ধারা শুধু কবিদের জনপ্রিয়তাই বাড়ায়নি, মানুষের মনোজগতে ছড়িয়ে দিয়েছিল সাহিত্যের আলোকরশ্মি।
অনুষ্ঠানে চারণ সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা জানান, ভাট কবিতা আমাদের সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই ভাট কবিতা এক সময় গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের আনন্দের খোরাক ছিল। বিলুপ্ত হওয়ার আগেই এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। হাঁটে-বাজারে কবিতা পাঠের মতো আয়োজন আবার শুরু হলে সাহিত্যচর্চায় এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। কবিতা ফিরে পাবে তার জনমানুষের স্বর।
আসরে সুরে ও ছন্দে \'ছায়ামতি দস্তরআলী\'র কাহিনী পাঠ করে শোনান, ভাট কবিতার লেখক প্রয়াত কবি ফজলু মিয়ার শিষ্য উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের লিটন মিয়া। তার মুখস্থ কবিতা পড়া আসরে উপস্থিত সবাইকে আকৃষ্ট করে।