চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো । ভেনিজুয়েলার সাধারণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে একনায়কতন্ত্র থেকে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার আন্দোলনের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে এই পুরস্কারের জন্য।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়) নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছর নোবেল পুরস্কার পেতে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তবে তার ভাগ্যে এ পুরস্কার জোটেনি।
এরআগে গত বছর জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিওকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়। তারা পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব এবং পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে কাজ করে।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। নিজের জীবনের গুরুতর হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশেই থেকে গেছেন, এমন একটি সিদ্ধান্ত যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি তার দেশের বিরোধী দলকে একত্রিত করেছেন। ভেনেজুয়েলার সমাজের সামরিকীকরণ প্রতিরোধে তিনি কখনও দ্বিধা করেননি। গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য অবিচল ছিলেন মাচাদো।
২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে জাপানি সংগঠন নিহোন হিদানকিও। এটি একটি পরমাণু অস্ত্র-বিরোধী সংগঠন, যা হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক হামলায় বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। তার আগে ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরানের কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।
প্রসঙ্গত, ১৯০১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ১১৪ বার নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১১ জন ব্যক্তি এবং ৩১টি সংস্থা মিলে পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১৪২। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি তিনবার (১৯১৭, ১৯৪৪, ১৯৬৩) নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে, এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তর দুইবার (১৯৫৪ ও ১৯৮১) পুরস্কার লাভ করেছে। বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
এদিকে প্রথা অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার হিসেবে গতকাল ৬ অক্টোবর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৩ বিজ্ঞানী- মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাগাগুচি। পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৫ সালে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম মার্টিনিস। বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং শক্তি পরিমাপ আবিষ্কারের জন্য তাদের মনোনীত করা হয়।
বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বছর যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড রবসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমর এম. ইয়াঘি। ধাতু-জৈব কাঠামোর উদ্ভাবনের জন্য তাদের মনোনীত করা হয়।
এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। মনোমুগ্ধকর এবং দুরদর্শী রচনার জন্য ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৩ অক্টোবর, সুউডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে অর্থনীতি ক্যাটাগরির পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছর নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শেষ হবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোম ও অসলোতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হবে। এ সময় প্রতি বিষয়ের বিজয়ীদের হাতে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার চেক, একটি মানপত্র এবং একটি স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। ২০২৩ সালে সুইডিশ ক্রোনারের মূল্যস্ফীতির কারণে প্রাইজ মানির পরিমাণ ১০ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি করে ১১ মিলিয়ন ক্রোনা করা হয়।