দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল একসময় ভারত-বাংলাদেশ আমদানি-রফতানির প্রাণকেন্দ্র ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে দেখা যাচ্ছে এই বন্দরে কাজের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি, নথিপত্র যাচাই ও শুল্ক নির্ধারণে স্বচ্ছতা আসার পর থেকে আগের মতো ‘সহজ পথে’ পণ্য ছাড়ানো আর সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক আমদানিকারক বিকল্প রুট হিসেবে ভোমরা স্থলবন্দরকে বেছে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে চিত্রটি ভিন্ন। সেখানে দিনদিন পণ্য পরিবহন ও আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। সীমান্ত সূত্রে জানা যায়, তুলনামূলকভাবে ভোমরায় তদারকি দুর্বল এবং বিভিন্ন অঘোষিত সুবিধা পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেনাপোলের কঠোর নজরদারি এড়িয়ে সেখানে ঝুঁকছেন।
রবিবার রাতে ৩৩ ব্যাটালিয়ন বিজিবি ভোমরা সরকারি পার্কিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে সরিষার খৈলের বস্তার ভেতর লুকানো দামি ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার করেছে। এসময় ১টি ভারতীয় ও ২টি বাংলাদেশি ট্রাক আটক করা হয়। বিজিবির এই অভিযানে ফের আলোচনায় এসেছে ভোমরা বন্দরের অনিয়ম ও চুরি-জালিয়াতির বিষয়টি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে কাঁচামাল, ফল, সরিষার খৈলসহ বিভিন্ন পণ্য ভোমরা বন্দরে কাজ বৃদ্ধি সহ পাঠানো হচ্ছে। এতে কাগজপত্রে জটিলতা এড়ানো গেলেও চুরি ও রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি দেশের প্রধান স্থলবন্দরের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেমে কাজ করছি। প্রতিটি চালান স্ক্যানার ও সফটওয়্যার যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে ছাড় হয়। তাই যাদের পণ্যে অনিয়ম থাকে, তারা বিকল্প রুট খোঁজেন।
অর্থনীতিবিদ ও বন্দর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেনাপোলে কড়াকড়ি মানে বাণিজ্য বাধা নয়, বরং এটি রাজস্ব নিরাপত্তা ও সুশাসনের প্রতীক। কিন্তু এক বন্দরে স্বচ্ছতা থাকলে আরেক বন্দরে শিথিলতা থাকলে ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল তদারকির দিকেই ঝুঁকবে।
তাদের মতে, বেনাপোলের মতো সব স্থলবন্দরেই সমানভাবে ডিজিটাল তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব সুরক্ষিত থাকবে। অন্যথায়, সীমান্ত বাণিজ্যে অনিয়ম ও পাচার রোধ করা কঠিন হবে।