তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (SMP) পরিচালনাকারী হিসেবে আরোপিত নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে গ্রামীণফোন বলেছে, এসব নির্দেশনা উচ্চ আদালতের রায় ও বিদ্যমান এসএমপি নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০১৮ সালে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এসএমপি প্রবিধানমালা জারি করে বিটিআরসি। এতে বলা হয়, কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব কিংবা তরঙ্গের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা থাকলে তাকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।
এই প্রবিধানের ভিত্তিতে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে বিটিআরসি। গ্রাহকসংখ্যা ও বার্ষিক রাজস্বের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির বাজার হিস্যা ৪০ শতাংশের বেশি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
নতুন কোনো সেবা চালুর আগে বিটিআরসির অনুমোদন নিতে হবে;
নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তনের (MNP) ক্ষেত্রে ‘লক ইন পিরিয়ড’ ৬০ দিন নির্ধারণ, যা অন্য অপারেটরদের জন্য ৯০ দিন;
আন্তঃঅপারেটর কলে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিটে পাবে ৭ পয়সা, যেখানে অন্য অপারেটররা পাবে ১০ পয়সা।
এসব নির্দেশনার বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, এসএমপি নীতিমালার উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং তা ন্যায্য বাজার পরিবেশ বজায় রাখা।
চিঠিতে গ্রামীণফোন জানিয়েছে, বিটিআরসির আরোপিত বিধিনিষেধ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বৈষম্য তৈরি করছে এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা চায়, এসব নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন বিটিআরসি ২০১৮ সালে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। প্রবিধানমালার আওতায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারটের গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিটিআরসি। এসএমপি ঘোষণার পর গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি কিছু নির্দেশনা (বিধিনিষেধ) জারি করে।
বিষয়গুলো নিয়ে চলতি বছরের মে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিটিআরসিকে গ্রামীণফোন চিঠি দেয়। এসব চিঠিতে গ্রামীণফোন জানায়, ২০২০ সালের জুনে আরোপিত নির্দেশনাগুলো এসএমপি নীতি ও হাইকোর্টের রায়ের লঙ্ঘন।
নীতিমালার ৯ ধারায় বলা আছে, কোনো এসএমপির কার্যক্রমের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমলে বা কমার আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গ্রামীণফোন বলছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিশ্লেষণ বা প্রতিবেদন তাদের জানানো হয়নি।
চিঠিতে গ্রামীণফোন আরও বলেছে, হাইকোর্ট বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নীতিমালার ৯ ধারার আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু তা পরিপালন করা হয়নি।
অ্যাসিমেট্রিক কল টার্মিনেশন রেট-সংক্রান্ত নির্দেশনা (মোবাইল অপারেটরদের আন্তকলে ভিন্ন ভিন্ন চার্জ নির্ধারণ) নিয়ে গ্রামীণফোন চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই নীতির ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নন-এসএমপি অপারেটরদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে। এতে শুধু গ্রামীণফোনেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে; পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারিয়েছে।
গ্রামীণফোনের দাবি, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত নন-এসএমপি অপারেটররা প্রায় ৬৯০ কোটি টাকা কেটে রেখেছে, যা গ্রামীণফোনের প্রাপ্য ছিল। এর ফলে সরকার প্রায় ২৭৬ কোটি টাকার কর ও ভ্যাট হারিয়েছে।
হাইকোর্টের রায় ও এসএমপি নীতির ৯ ধারার আলোকে নির্দেশনাগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে গ্রামীণফোন। পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্দেশনাগুলো স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে তারা।
তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (SMP) নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বর্তমান এসএমপি নীতিমালায় রয়েছে একাধিক বৈষম্যমূলক নির্দেশনা, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তৈরি হওয়া নীতিমালাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু বর্তমানে কার্যকর এসএমপি নীতিমালাটি এমনভাবে প্রয়োগ হচ্ছে, যা এসএমপি অপারেটরের অগ্রগতি ও উদ্ভাবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই আমরা এটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, যাতে সবার জন্য একটি ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অ্যাসিমেট্রিক (অসাম্যপূর্ণ) ইন্টারকানেকশন রেট কার্যত দক্ষ অপারেটরের অর্জিত অর্থকে কম দক্ষ অপারেটরদের জন্য ভর্তুকি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
এর ফলে দক্ষতাকে পুরস্কৃত করার পরিবর্তে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার গঠনের বিপরীত দৃষ্টান্ত। তাই কোনো পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু বাজার বিশ্লেষণ না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন চার্জে এই বৈষম্য প্রত্যাহার করা উচিত— বলেন তানভীর মোহাম্মদ।
এদিকে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে কমিশনের ২৯৮তম সভায় এসএমপি ও নন-এসএমপি অপারেটরদের মধ্যে মোবাইল টার্মিনেশন রেট (MTR) সংক্রান্ত আয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, ২০২০ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে রবি ও বাংলালিংক এবং ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত টেলিটক এই খাতে মোট ৭০০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৭ টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে আছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি জানায়, নন-এসএমপি অপারেটররা এসএমপি নীতি অনুযায়ী এমটিআর থেকে ৩ পয়সা/মিনিট হারে পাওয়া অর্থের আলাদা হিসাব রাখবে। তারা এই অর্থ দুর্গম, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ব্যয় করবে। বছরের জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এসব অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাব তারা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে।