জনতা ব্যাংক থেকে হানজালা টেক্সটাইল পার্ক লিমিটেডের নেওয়া ১৫৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে বেশ আগেই। ঋণটি দু’দফা পুনঃতপশিল করেছে ব্যাংক। ঋণ পুনঃতপশিলের জন্য নির্ধারিত ডাউনপেমেন্টের টাকাও দেয়নি গ্রাহক। সুদে আসলে গত ১১ বছরে ২ শতাংশেরও কম ঋণ পরিশোধ হয়েছে। এমন গ্রাহকের খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাসময়ে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবার জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা অর্থঋণ আদালত-৫ এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঋণ আদায়ে যথাসময়ে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৬ ধারায় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মামলা দায়ের হয়নি, ঋণের মেয়াদ বাড়ানোন পরও বিবাদীরা পরিশোধযোগ্য সুদ-আসলের ২ শতাংশ টাকাও পরিশোধ করেনি। দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এরকম অবস্থায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে আদালত এবং সরকারকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এই আদেশ কার্যকরের জন্য আদেশের কপি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘আদালতের আদেশের কপি এখনও পাইনি। হাতে পাওয়ার পর নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের হানজালা টেক্সটাইল পার্ক লিমিটেডকে ২০১৪ সালে প্রকল্প ঋণ দেয় জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখা। শুরুতে আট বছরের জন্য প্রকল্প ঋণ হিসেবে ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণ এবং ২০ লাখ ডলারের এলসি সীমা অনুমোদন করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে ঋণের কোনো কিস্তি দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এলসির দায়ও পরিশোধ না করায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার নতুন ফোর্স ঋণ সৃষ্টি করে ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর। তাঁর স্ত্রী আরিফা আকবর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ঋণ নেওয়ার পর থেকে গত ১১ বছরে গ্রাহক মাত্র ১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মেনে ঋণ পরিশোধ না করায় সম্পূর্ণ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ বিবেচনায় ঋণটি পুনঃতপশিল করা হয়। গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি জমার তারিখ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবারও ঋণটি পুনঃতপশিল করে ব্যাংক। এ দফায় আরও তিন বছর সময় বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফা ঋণ পুনঃতপশিলের জন্য ডাউন পেমেন্টের শর্ত পরিপালন করেনি গ্রাহক। আট বছর মেয়াদে দেওয়া ঋণের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর পরও বিবাদীরা ব্যাংকের পাওনার ২ শতাংশ টাকাও পরিশোধ করেনি। এভাবে সময় পাওয়ার পরও বিবাদীরা টাকা পরিশোধ না করলেও জনতা ব্যাংক বিবাদীদের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসে।
অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ আদায় না হলে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। এতদিনেও মামলা না করায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় অধিকতর সংহত করার লক্ষ্যে বন্ধকি সম্পত্তিগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে হালনাগাদ মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং বন্ধকি সম্পত্তির দৃশ্যমান স্থানে চারটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে স্থিরচিত্র আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।