হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে যা বলছেন বিশ্বনেতারা


লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ব নেতারা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র সংগঠনের প্রধানের হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাসরুল্লাহকে হত্যার ঘটনাকে ‘ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে নাসরুল্লাহর হত্যায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। দেশটিতে পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, নাসরুল্লাহর মৃত্যু তাদের ধ্বংস ডেকে আনবে।

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, নাসরুল্লাহর মৃত্যু ছিল ‘হাজার হাজার আমেরিকান, ইসরাইলি ও লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ‘ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ’। ওয়াশিংটন ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সমর্থন করে এবং বাইডেন তার বিবৃতিতে আরও বলেন, এ অঞ্চলে বাহিনীর প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি আরও উন্নত করা হবে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, নাসরুল্লাহ একজন ‘সন্ত্রাসী’ যার হাতে আমেরিকার রক্ত লেগেছে। এ ছাড়া কমলা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুথিদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সর্বদা সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন।

রাশিয়া

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা ইসরাইলের সর্বশেষ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং লেবাননে অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যোগ করেছে, এ হত্যাকাণ্ডের ফলে এই অঞ্চলে যে ‘দুঃখজনক’ পরিণতি হতে পারে তার জন্য ইসরাইল সম্পূর্ণ দায় বহন করবে।

জার্মানি

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এআরডি টেলিভিশনকে বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ড সমগ্র লেবাননের জন্য অস্থিতিশীলতার হুমকি, যা ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাসরুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন, নাসরুল্লাহর কারণে সেখানে নিরপরাধ বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে ইসরাইল। সমগ্র অঞ্চল জুড়ে যে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা এই সংকটময় সময়ে শান্ত ও সংযমের আহ্বান জানাই।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামি এক্স-এর একটি পোস্টে বলেন, তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা রক্তপাতের অবসান ঘটাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি। লেবানন ও ইসরাইলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় কূটনৈতিক সমাধান।

ফ্রান্স

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারোট ইসরাইলকে অবিলম্বে লেবাননে তাদের হামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, তার দেশ যে কোনো স্থল অভিযানের বিরোধিতা করছে। ফ্রান্স অন্যান্য দল বা দেশ, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে অতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুঁতেরেস এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বৈরুতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

হামাস

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে আকৃষ্ট করেছে। তারা নসরুরাল্লাহর হত্যাকে একটি কাপুরুষোচিত ‘সন্ত্রাসী’ কাজ বলে অভিহিত করেছে। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা এই বর্বর ইহুদিবাদী হামলা এবং আবাসিক ভবনকে টার্গেট করে বেসামরিকদের হত্যার কঠোর নিন্দা জানাই।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস লেবাননের কাছে নাসরুল্লাহ এবং বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

হুথি

ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি এক বিবৃতিতে বলেছে যে, নাসরুল্লাহর হত্যা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ত্যাগের শিখা, উৎসাহের উত্তাপ, সংকল্পের শক্তি বাড়িয়ে তুলবে।

তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও গাজায় গণহত্যার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। এবার নাসরুল্লাহর নাম সরাসরি উল্লেখ না করেই লেবানন গণহত্যার শিকার হচ্ছে বলে নিজের এক্স বার্তায় উল্লেখ করেছেন।

কিউবা

কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল তার এক্স বার্তায় এই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত টার্গেট কিলিং বলে অভিহিত করেছেন। এতে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এর জন্য কিউবার প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই এক্স-এ এই হত্যাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডেভিড এপস্টেইনের একটি বার্তা পুনরায় পোস্ট করেছেন। যেখানে বলা হয়, ইসরাইল সমসাময়িক সর্বশ্রেষ্ঠ খুনিদের একজনকে নির্মূল করেছে। এতে আরও বলা হয়, ‘আজ পৃথিবী একটু স্বাধীন’।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে বলেছেন, এই উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা এই অঞ্চলে একটি সত্যিকারের যুদ্ধ এড়াতে সকল পক্ষকে প্রজ্ঞা ও সংযম দেখানোর আহ্বান জানাই।

ভেনিজুয়েলা

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নাসরুল্লাহ ও লেবাননের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তারা এটাকে ন্যায্যতা দিতে চায়, কিন্তু তাকে হত্যা করার জন্য তারা বিল্ডিং, হাউজিং এস্টেটে হামলা করেছে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। এর জন্য যে শব্দ আছে তা হচ্ছে অপরাধ।