ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় কেটেছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বড় একটা সময়। রপ্তানি খাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদনসহ সার্বিক রপ্তানি কার্যক্রম এতে ব্যাহত হয়। প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষ শুরু হয় সরকার পরিবর্তনের পরপরই। আশুলিয়া, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রম অসন্তোষ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এ রকম বৈরী বাস্তবতার মধ্যেই গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। একক মাসের হিসাবে ডিসেম্বরে রপ্তানির হারটা আরও বেশি। মাসটিতে বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে কম হারে বাড়ে রপ্তানি আয়। তবে গত তিন মাসে রপ্তানি আয়ে প্রতি মাসেই বেশ ভালোই প্রবৃদ্ধি এসেছে। এ সুবাদেই ছয় মাসের গড় রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও ভালো। এই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বাড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আগস্টে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে হয় ২১ শতাংশ। নভেম্বরে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে রপ্তানি বাড়ে ১৮ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪৬৩ কোটি ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট রপ্তানির পরিমাণ ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ টানা পাঁচ মাসের শ্রম অসন্তোষের মধ্যেই পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২২৩ কোটি ডলার বা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি এত বেশি হারে বাড়ার অনেক কারণের কথা বলেছেন এ খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও উদ্যোক্তারা লক্ষ্যচ্যুত হননি। উৎপাদন ও রপ্তানি ঠিক রাখতে বিকল্প সব সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারা। মৌলিক পণ্যের সঙ্গে মূল্য সংযোজিত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে দিন দিন। একইভাবে উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানিও বাড়ছে। প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় নীতি সুদহার কিছুটা কমেছে। ওইসব দেশে চাহিদাও বেড়েছে। কমপ্লায়েন্স শর্ত পরিপালন, সার্কুলার আরএমজি, পরিবেশসম্মত উৎপাদন কাঠামোয় বড় বিনিয়োগ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের পোশাকের প্রতি পশ্চিমা ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের আস্থা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া সভাপতি থাকাকালে তিনি নতুন বাজার সৃষ্টি, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা ও ব্র্যান্ডিংয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন। এসবের ফলও পাচ্ছে পোশাক খাত। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন বছর রপ্তানি খাত আরও ভালো করবে বলে মনে করেন তিনি।
তৈরি পোশাক ছাড়াও রপ্তানি খাতের ছোট-বড় প্রায় সব খাতেই রপ্তানি বেড়েছে গত ছয় মাসে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বহুদিন পর চিংড়িসহ সব ধরনের হিমায়িত মাছের রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশেরও বেশি। রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি ডলার। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ডলার। ওষুধের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১১ কোটি ডলারের ওষুধ। চামড়া ও চামড়াপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য। প্রায় ছয় বছর পর পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানিও বাড়ল গত ছয় মাসে। রপ্তানি বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি। রপ্তানি হয়েছে ৪২ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।