বদলে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ির চিত্র


বদলে যাচ্ছে দেশের মানুষের ঘরবাড়ির অবস্থা। আগে যেখানে শহর বা গ্রামে খড়, মাটি, কাঠ বা বাঁশের ঘরই ছিল প্রধান। এগুলোর স্বল্প মূল্য এবং সহজপ্রাপ্যতার কারণে অল্প অর্থ খরচ করে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করত। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সক্ষমতাও। ফলে ঘরবাড়ির অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ছে ইট, কংক্রিট, সিমেন্ট, সিরামিকস টাইলস, ফার্নিশ কাঠ এবং পোড়া মাটির ব্যবহার। এদিকে দিন দিন ব্যবহার কমছে-কাঠ, বাঁশ, চাটাই, ছন, হোগলাপাতা, তাল বা সুপারি গাছের গুঁড়ির। বসতঘরের দেওয়াল, মেঝে ও ছাদের বদলে যাওয়া চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার রোববার বলেন, গ্রামে আর আগের দৃশ্য চোখে পড়ে না। এখন মানুষের বসতবাড়ি অনেক উন্নত হয়েছে। এটা অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিরই প্রমাণ। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। ফলে মানুষ একটু ভালো খেতে বা ভালোভাবে থাকতে চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। তৃপ্তির ঢেঁকুর আমরা তুলছি না। লক্ষ্য অনুযায়ী সরকার আরও সামনে এগিয়ে যেতে কাজ করছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে খানার (পরিবার) বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে, মানুষের বসতঘরের দেওয়াল নির্মাণ উপকরণের ক্ষেত্রে উন্নত উপকরণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের হিসাবে সিমেন্ট, কংক্রিট, ইট বা পোড়া মাটির ব্যবহার হতো ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০২২ সালে সেটি বেড়ে হয় ৪৫ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের প্রতিবেদেন সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া বাড়ছে সিরামিকস টাইলস বা ফার্নিশ কাঠের ব্যবহার। এক্ষেত্রে ২০২১ সালে ছিল দশমিক ৪৭ শতাংশ, পরের বছর বেড়ে দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয়েছে দশমিক ৭০ শতাংশ। এদিকে কমছে কাঠ, বাঁশ, চাটাই, তাল বা সুপারি গাছের গুঁড়ি ব্যবহার। ২০২১ সালে এগুলোর ব্যবহার ছিল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পরের বছর সেটি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। পাশাপাশি খড়, ছন, গোলপাতা, তালপাতা, বিচালি ও পলিথিনের ব্যবহারও কমছে। ২০২১ সালে এগুলোর ব্যবহার ছিল দশমিক ১৯ শতাংশ, তার পরের বছর একটু বেড়ে হয় দশমিক ২০ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে জরিপে অনেকটাই কমে দাঁড়িয়েছে দশমিক ১৮ শতাংশে। মাটি বা কাদামাটির ব্যবহার ২০২১ সালে ছিল ৮ দশমিক ০১ শতাংশ, পরের বছর সেটি কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়-ধাতব টিন, সিআই শিট ও ঢেউটিনের ব্যবহারও কমছে। ২০২১ সালে এগুলোর ব্যবহার ছিল ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, পরের বছর কিছুটা কমে হয় ৪২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের হিসাবে আরও কিছুটা কমে হয়েছে ৪২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (এসভিআরএস) প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন রোববার বলেন, আমরা দুটি উদ্দেশ্যে এই সার্ভেতে বসতবাড়ির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। একটি হলো মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া। অন্যটি হলো এটির সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় জড়িত। কেননা বাসস্থান খারাপ বা নোংরা কিংবা দুর্বল হলে অনেক রোগ-জীবাণু সহজেই আক্রমণ করতে পারে। মানুষের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু প্রতিবেদনে যে ফলাফল পাওয়া গেছে এতে মনে হয় এটি অবশ্যই মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহির্প্রকাশ ঘটেছে। ধারাবাহিকভাবে উন্নত উপকরণ ব্যবহার বাড়ছে। মানুষ উন্নত, টেকসই এবং দুর্যোগ সহনীয় করে তাদের আবাসন তৈরি করছে। এর মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আবার সুস্থ থাকার হারও বেড়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে বসতঘরের মেঝের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষের বসতঘরের মেঝের নির্মাণ উপকরণের ক্ষেত্রেও উন্নত উপকরণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের হিসাবে সিমেন্ট, কংক্রিট, ইট বা পোড়া মাটির ব্যবহার হতো ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ। পরের বছর সেটি বেড়ে হয় ৪২ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের প্রতিবেদেন সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশে। উলটো দিকে কমছে কাঠ, বাঁশ, চাটাই, তাল বা সুপারি গাছের গুঁড়ি ব্যবহার। ২০২১ সালে এগুলোর ব্যবহার ছিল ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, পরের বছর সেটি কমে হয়েছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশে। এছাড়া ব্যাপক বেড়েছে সিরামিকস টাইল বা ফার্নিশ কাঠের ব্যবহার। প্রতিবেদনে বসতঘরের ছাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বেড়েছে সিমেন্ট ব কংক্রিটের ব্যবহার। ২০২১ সালে এই উপকরণের ব্যবহার ছিল ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ২০২২ সালে সেটি বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯১ শতাংশে। কমেছে কাঠ, বাঁশ, চাটাই, খড়, ছন, বিচালি, গোলপাতা, তালপাতা ও পলিথিন ব্যবহার। ২০২১ সালে এগুলোর ব্যবহার ছিল শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, পরের বছর সেটি কমে হয় শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে সেগুলোর ব্যবহার আরও কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশে।