অনাহারেই বেশি মৃত্যু হচ্ছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজায় ১৩ হাজার ৪৩০ শিশু নিহত
অনলাইন নিউজ ডেক্স
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি বিমান হামলা এবং স্থল অভিযানে মোট ১৩ হাজার ৪৩০ জন শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার মিডিয়া অফিস। সোমবার এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত ১৫০ দিনে ১৩ হাজার ৪৩০ জন শিশু এবং ৮ হাজার ৯০০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া প্রায় ৭ হাজার মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা নিখোঁজ রয়েছে, যার ৭০ শতাংশই নারী এবং শিশু।
মিডিয়া অফিস আরও জানিয়েছে, একই সময়ের মধ্যে ইসরাইলি হামলায় ৩৬৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ১৩২ জন সাংবাদিকও প্রাণ হারিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ৩০ হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি শিশু এবং ৬ হাজারের বেশি নারীসহ কমপক্ষে ৭২ হাজার ৪৩ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা ইসরাইলি আক্রমণে বাস্তুচ্যুত এবং তাদের সকলেই খাদ্য নিরাপত্তাহীন। এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। পরিস্থিতি এতোটাই অমানবিক যে, গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা মারা যাচ্ছে অনাহারে। এমন তথ্যই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। এমনকি গাজার শিশুরা গুরুতর মাত্রায় অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরুর পর থেকে এই সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো আল-আওদা এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরিদর্শন করে তার সংস্থাটি। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া একটি পোস্টে হাসপাতাল পরিদর্শনের পর তিনি ‘গুরুতর ফলাফল’ পাওয়ার কথা বলেন। পোস্টে টেড্রোস লিখেছেন, খাবারের অভাবের ফলে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং গাজার শিশুরা ‘গুরুতর মাত্রায় অপুষ্টির’ শিকার হয়েছে। হাসপাতাল ভবনগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ১৫ শিশু মারা গেছে। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা সোমবার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি হাসপাতালে রোববার ১৬তম শিশুর মৃত্যু হয়েছে। টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলছেন, উত্তর গাজায় মারাত্মক মাত্রায় অপুষ্টি রয়েছে, শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের গুরুতর ঘাটতি রয়েছে এবং হাসপাতাল ভবনগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গাজার এই অঞ্চলে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ খুবই অল্প খাদ্য বা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বসবাস করছে।
এর আগে জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’। জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ - যা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ - বিপর্যয়কর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।