অর্থনীতি সচল ও ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা অগ্রাধিকার


অর্থনৈতিক খাত সচল করা এবং অস্থিরতা কমিয়ে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোই আমার অগ্রাধিকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একার পক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। স্বল্পসময়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষকের সার, জ্বালানি তেল, নিত্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারি আমদানিতে। এসব পণ্যের এলসি খুলতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, প্রথম দিনই বলে দিয়েছি। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক ভালো করার তুলনায় মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য ফেরানোর ওপর গুরুত্ব দেব। সোমবার নিজ কার্যালয়ে বসে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। একটি কান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে শুক্রবার শপথ নিয়ে শনিবারই প্রথম অফিস করেন তিনি। অর্থনীতি সচল করতে নানা উদ্যোগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাকে দিয়েছেন দিকনির্র্দেশনা। এছাড়া ব্যাংক, বন্দর পুরোপুরি চালুর নির্দেশ দিয়েছেন। রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়াতে মনিটরিংয়ের তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। এছাড়া অপচয় বন্ধ করে সৎভাবে অর্থ ব্যবহার করতে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের জোর দিতে বলেছেন এ উপদেষ্টা। দায়িত্ব নেওয়ার পর অগ্রাধিকার কোন কোন খাতে দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক ও অর্থনীতি খাত ডিসিপ্লিনে আনা। আমার ইমিডিয়েট কাজ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো। সেখানে অনেক এনার্কি হচ্ছে। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। ব্যাংক খাতের অনিয়ম চিহ্নিত করতে বিভিন্ন সময় অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক কমিশন গঠন করবে কি না-এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে ব্যাংকগুলো চলুক। কমিশন গঠনের বিষয় পরে দেখা যাবে।’ প্রসঙ্গত, নানা কারণে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাতে ব্যাপক হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের অঙ্ক ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। ঋণের নামে অনেক লুটপাটও হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। উপদেষ্টা বলেন, এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে জীবন-জীবিকার নিত্যপণ্য, জ্বালানি তেল এবং কৃষকের সার আমদানির ব্যাপারে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে সার আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এক মাস আগেও এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে, তা মনে করিয়ে দিলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ‘প্রথম দিনই আমি বলে দিয়েছি যাতে এলসি খুলে দেয়। জ্বালানি আমদানি, কৃষি ও শিল্পের কাঁচামাল-কোনোকিছুর আমদানিই আটকাবে না। জীবনযাত্রা ও শিল্পের উৎপানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পণ্যের আমদানি স্বাভাবিক থাকবে। এ মুহূর্তের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করব। প্রসঙ্গত, জুলাইয়ে জাতীয় পর্যায়ে বেড়েছে সাধারণ মূল্যস্ফীতি, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, জুনে যা ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। জুলাইয়ে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। অস্বাভাবিক এ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষকে অনেক আঘাত করছে। এটি নিয়ন্ত্রণে নতুন কোনো পদক্ষেপ নিবেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে একা সম্ভব নয়। এখানে খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা আছে। এছাড়া পণ্যের সরবরাহ এবং নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জড়িত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসব। ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াব’, যোগ করেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাইরে থেকে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক দেখে আমরা বলছি, বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এই সূচক নিয়ে মানুষের কোয়ালিটি অব লাইফ ম্যাজার করা যায় না। মানুষের জীবনযাত্রার মান, স্বাচ্ছন্দ্য, চলাফেরা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ ভবিষ্যৎ যেন নিশ্চিত হয়-সেদিকে গুরুত্ব দেব। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, আয়ের সংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির চেষ্টা করব। এদিকে রোববার অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মূল্যস্ফীতির কশাঘাতের কথা তুলে ধরে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেছেন, আমি দেখেছি অফিসের একজন কর্মচারী কাঁচকলার তিনটি টুকরো দিয়ে দুপুরের ভাত খেতে। সাধারণ মানুষ এক মাসে একবার মাংস খেতে পায় কিনা জানি না। মূল্যস্ফীতি দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। লাইনচ্যুত অর্থনীতির ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়েছেন, এখন সচল করতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে, আপনি কী মনে করেন-প্রশ্নের জবাবে এ উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন কারণে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হচ্ছে। রাজস্ব আহরণ বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে আমি কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছি। এজন্য অবশ্য সময় লাগবে। তবে এটি দীর্ঘসময় নয়, কয়েকদিন পরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।