বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটের দিকে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার মাত্র ৭ দশমিক ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এডিপির বাস্তবায়ন কম হওয়া, দেশীয় ও বৈদেশিক খরচের অনিয়ম এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের কমতি ইত্যাদি কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৭.৯০ শতাংশ, যা অত্যন্ত অস্বস্তিকর। তিনি জানান, অনেক প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। এমনকি অনেক প্রকল্পের ব্যয় কমানো হয়েছে, এবং শৃঙ্খলার জন্য সংশোধিত বাজেটে এডিপির আকারও ছোট করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেছেন, বাজেটের খরচের প্রবণতা থেকে অপচয় কমানোর উদ্দেশ্যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে। তবে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে কিছু ভাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া এডিপি সংশোধন করা সম্ভব হবে।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সংকট
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হ্রাস সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাতে মানুষের বিনিয়োগে আগ্রহ কমে গেছে। বিশেষত সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা অনুভব করছেন, যার ফলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে। তিনি এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের নীতিগত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
প্রকল্প পরিচালকদের সংকট
প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা আরও বাড়ছে। অনেক প্রকল্প পরিচালক পদত্যাগ করেছেন অথবা তারা পালিয়ে গেছেন, যার ফলে নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মাতারবাড়ী প্রকল্পের পরিচালক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন, যিনি সরকারি সম্পদ বিক্রি করে গেছেন এবং এখনো তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন
সংশ্লিষ্ট খাতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে একনেকের সভায় পাঁচটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মোট ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার প্রায় ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা খরচ করবে, বাকী অর্থ বৈদেশিক ঋণ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোতে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, নৌপরিবহন, স্থানীয় সরকার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে সংশয় থাকলেও, উপদেষ্টা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এবং এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তির নিরাপত্তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন শ্লথ হওয়া উদ্বেগজনক। সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এডিপি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা যায় এবং বেসরকারি বিনিয়োগে সংকট মোকাবিলা করা যায়। প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন ও উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি পুনরায় গতিশীল হতে পারে, তবে সেজন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে সঠিক এবং প্রযোজ্য উন্নয়ন কাজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।