আগের দামে গ্যাস চান শিল্প মালিকরা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
নিরবছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও তখন শিল্পের স্বার্থে শিল্প মালিকরা বাড়তি দাম মেনে নিয়েছিলেন। এখন বাড়তি দাম দিয়েও গ্যাস মিলছে না।
তাই নিরবছিন্ন সরবরাহ দিতে না পারলে বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। একই সঙ্গে সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতি ব্যবসাবান্ধব নয় এবং দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। টেক্সটাইল খাতের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি)-এর প্রস্তুতি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, টেক্সটাইল খাত ভালো নেই। গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে, ডলারের সংকট এ শিল্পকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত বছর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্যাসের দাম ৮৭ শতাংশ বাড়ানো হলো।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় পেট্রোবাংলা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি তারা এ বিষয়ে পরবর্তীতে আমাদের আলোচনার জন্যও ডাকেনি। যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া না যায় তাহলে আগের দামেই গ্যাস সরবরাহ করা হোক। তাতে শিল্প কিছুটা হলেও টিকে থাকতে পারবে।
গ্যাস সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে খোকন বলেন, গত এক মাস যাবৎ চট্টগ্রাম, সাভার, আশুলিয়া. গাজীপুর, আড়াইহাজার ও নারায়ণঞ্জে গ্যাসের গড় চাপ ছিল ০-২ পিএসএফের মধ্যে। গত ১৫ দিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জে বিসিকের আশপাশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অথচ গ্যাস না থাকা সত্বেও মিলগুলোকে ন্যূনতম গ্যাস বিল বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে মিল বন্ধ থাকায় উৎপাদন না হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, যা আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, নিরবছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে না পারলে টেক্সটাইল খাতে ভবিষ্যতে নতুন বিনিয়োগ হবে কিনা-সংশয় হয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছে। কিন্তু নিরবছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ দিতে পারছে না। বিষয়টি রান্না না করে অতিথি দাওয়ার দেওয়ার মতো অবস্থা।
আক্ষেপ প্রকাশ করে খোকন আরও বলেন, নানামুখী সংকটে গতকাল (রোববার) অন্তত পাঁচটি কারখানা বিক্রির বিজ্ঞাপন পেয়েছি। অথচ টেক্সটাইল খাতে এক লাখ ডলারের গ্যাস দিলে ৪০ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় করা সম্ভব। মোট গ্যাসের ১৩ শতাংশ বাসা-বাড়িতে এবং ৬ শতাংশ সিএনজিতে ব্যবহার করা হয়। সেই গ্যাসও রেশনিং করে শিল্পে দেওয়া হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি সম্ভব। বর্তমানে অনেক ক্রেতা সংকটের কারণে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন, কারণ যথাসময়ে অর্ডার ডেলিভারি করতে পারবে কিনা সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।
মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে খোকন বলেন, সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতি ব্যবসাবান্ধব নয়। একদিকে রপ্তানির ডলারের মূল্য আটকিয়ে রাখা হয়েছে, এতে রপ্তানিকারকরা এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা হারাবে। অন্যদিকে সুদের হার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, প্রতিযোগী সক্ষমতা হারাবে শিল্প। যে নীতি অনুসরণ করে মুদ্রানীতি করা হয়েছে, সেই একই নীতি অনুসরণ করায় আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি ৩০০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আজকের দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী। রপ্তানির ডলারের দাম ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, আবার সেই ডলারই কিনতে ১২৩ টাকা লাগছে। এই বিশাল পার্থক্যের কারণে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লুণ্ঠিত ঋণ এবং খেলাপি ঋণ আলাদা করে আগামীতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ডিটিজির উদ্বোধন: রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে (আইসিসিবি) আগামী বৃহস্পতিবার থেকে চার দিনব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি) শুরু হচ্ছে।
এবারের প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৩২টি দেশের এক হাজার ১০০ টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি উৎপাদকরা অংশ নেবেন। প্রদর্শনীটি টেক্সটাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।