আজীবন বহিষ্কারের হুমকিতেও বিএনপির ২০ প্রার্থীকে দমানো গেল না
অনলাইন নিউজ ডেক্স
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিকে আমলে না নিয়ে বিএনপির ২০ নেতাকর্মী প্রার্থী হলেন। সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর হতে তারা নিজেদের মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে।
গত ২০ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু খোলা বিবৃতি পাঠিয়ে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাসিক নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ছিল। এ সময়ের মধ্যে মেয়র পদে চারজন, ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১২৪ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ৪৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই তালিকা থেকে ‘বিএনপি’ হিসেবে পরিচিত অন্তত ২০ জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। যদিও মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেছেন ওরা এখন আর বিএনপি নেই।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থিতার তালিকা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মহানগরীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজপাড়া এলাকায় এই হাবিবুর রহমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওই সময় পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামি হন। লিলি হলের মোড়ে গাড়িতে পেট্রল বোমা মেরে চালককে হত্যার মামলারও আসামি তিনি। হাবিবুর রহমান এবার দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।
হাবিবুর বলেন, এলাকার মানুষ তাকে চান বলেই তিনি ভোট করছেন।
অন্যদিকে রাসিকের সংরক্ষিত নারী আসন ৩ আসনের কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম বেলী মহানগর মহিলা দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এবারো তিনি মনোনয়নপত্র জমা করেছেন।
মুসলিমা বেগম বেলী বলেন, এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। মানুষ আমাকে আবার চাচ্ছেন; কিন্তু দল নিষেধ করছে। তাই সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেই পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগ করা দেড় মাস হয়ে গেল। শুধু ভোট করার জন্যই দল থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন আবু বাক্কার কিনু। তিনি সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। আবু বাক্কার কিনুর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এখনো বিএনপি নেতাদের আড্ডা জমে কিন্তু আবু বাক্কারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেননি। এবারো ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন
মহানগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে কবীর টুটুলও নির্বাচন করছেন। বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে এসেছেন হামিদুল ইসলাম সুজন। রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউজ্জামান প্রার্থী হচ্ছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আছেন বিএনপির মাসুদ রানা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক যুবদল নেতা মো. টুটুল।
বিএনপির আবদুস সোবহান লিটন এখন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এবারো তিনি প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের টানা কয়েকবারের কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ যুবদলের থানা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি এবারো ভোটে অংশ নিচ্ছেন। বেলাল আহমেদ বলেন, আমি অনেক দিন আগে পদে ছিলাম। এখন পদে নাই। ভোটে অংশ নিতেও সমস্যা নাই।
মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা যুবদলের সাবেক নেতা। তিনিও ভোট করছেন। মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান টিটো প্রার্থী হয়েছেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ২৬ নম্বরের কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিএনপি করেন। মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল আমিন আযব ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি এবারো প্রার্থী। আর ২৮ নম্বরের কাউন্সিলর আশরাফুল আলম বাচ্চু ছাত্রদল থেকে এসে বিএনপি করতেন। এবারো প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
এছাড়া ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদল সদস্য সাইদুর রহমান সাঈদ ও ২৮ নম্বরে বিএনপির আবদুস সাত্তার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
মহিলা দলের নেত্রী সামসুন নাহার সংরক্ষিত নারী আসন ৫ এর কাউন্সিলর। এবারো তিনি ভোট করছেন। এছাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মোসা. নূরবানু ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাহনাজ বেগম শিখা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা এখন বিএনপির লোক না। ভোটে অংশ নেওয়া কেউ পদে থাকলে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। আর যদি কেউ পদে না থাকে তাহলে বহিষ্কার করার কিছু নাই। তারা আগামীতে পদ পাবে না।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।