আমি জিততে না পারলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধবে ॥ ট্রাম্প


আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফরমে সই করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্থানীয় সময় শুক্রবার তিনি ফরমে সই করেন। এরপর এক্সে পোস্ট দেওয়া এক বার্তায় ৫৯ বছর বয়সী কমলা বলেন, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। প্রতিটি ভোট আদায়ে আমি কঠোর পরিশ্রম করব। কমলা বলেন, ফরমে সই করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আমার প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি। জনগণের ভোটে আমরা জয়ের মুখ দেখবই। এই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ফ্লোরিডায় সমর্থকদের উদ্দেশে এক অভিনব আশঙ্কার কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমি জিততে না পারলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। ট্রাম্প বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আপনারা সবাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। একদল অযোগ্য লোক আমাদের দেশ পরিচালনা করছে। এদিন ফ্লোরিডায় নিজ বাসভবনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে ইসরাইলের প্রতি সবসময় ইতিবাচক ছিলাম। তবে বাইডেন প্রশাসন ইরান ইস্যুতে কিছুই করেনি। এটি দুঃখজনক হলেও সত্যি। আমরা ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরও হয়ে এসেছিলাম। যা অসাধারণ একটি কাজ ছিল। আমার করা ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে সেরা কাজ ছিল এটি। তবে বাইডেন প্রশাসন এ ইস্যুতে কিছুই করতে পারেনি। ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে পারলে সেটি সবার জন্য ভালো হতো। এমনকি ইরানের জন্যও হতো। এটিই মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করত। এ সময় তিনি কমলা হ্যারিসকে বাইডেনের চেয়েও খারাপ বলে সমালোচনা করেন। খবর দ্য হিল, আলজাজিরা ও এএফপির। কমলা হ্যারিসকে ইহুদিবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, কমলা নবজাতকদের হত্যার অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কয়েক দিনে জনমত জরিপগুলোয় ট্রাম্পকে জোর টক্কর দিচ্ছেন কমলা। এমনকি কখনো কখনো ট্রাম্পের থেকে এগিয়েও গেছেন। দক্ষিণ ফ্লোরিডায় শুক্রবারের ওই সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বেশিরভাগ সময়জুড়ে কমলার বিষোদ্গার করেন। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর থাকার সময়ে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা কী কী করেছেন, তা নিয়ে অভিযোগ তোলেন। তবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের বেশিরভাগ অভিযোগের সঙ্গেই বাস্তবতার মিল নেই। বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। কমলা সেদিন কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন না। এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি ইহুদিদের পছন্দ করেন না। তিনি ইসরাইলকে পছন্দ করেন না। এভাবেই এটা হয় এবং এভাবেই সব সময় এটা হতে থাকবে। তার পরিবর্তন হবে না। এর আগেও ট্রাম্প বারবার কমলাকে ইহুদিবিদ্বেষী বলেছেন। বুধবার নর্থ ক্যারোলাইনায় দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস পুরোপুরি ইহুদি জনগণের বিপক্ষে। ট্রাম্প এভাবে কমলাকে ইহুদিবিদ্বেষী বলে আক্রমণ করতে চাইছেন। অথচ কমলার স্বামী ডগলাস এমহফ একজন ইহুদি। কমলাকে ইহুদিবিদ্বেষী বলেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। কমলাকে আক্রমণ করতে তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, কমলা চিকিৎসকদের বাধ্য করতে চাইছেন যেন তারা শিশুদের জন্মনিরোধ ওষুধ দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি কমলা হ্যারিস নিজের পথে থাকেন, তবে তিনি গর্ভপাত বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় আইন জারি করবেন। যে আইনে মায়ের গর্ভ থেকে আট মাস, নয় মাসের শিশুদের বের করে নেওয়া হবে এবং এমনকি জন্মের পরও নবজাতকদের হত্যা করা হবে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী এবং কমলার নির্বাচনী শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পেট বুটেজেজ বলেন, ট্রাম্পের এসব কথাবার্তায় বোঝা যায় তিনি ভয় পেয়েছেন। তিনি জানেন, এক মঞ্চে কমলার সঙ্গে থাকাটা তার জন্য সুখকর হবে না। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর কমলা হ্যারিসকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, তিনি ও সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের জয় নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। ওবামা বলেন, এ সপ্তাহের শুরুতে আমি আর মিশেল আমাদের বন্ধু কমলা হ্যারিসকে ফোন করেছিলাম। আমরা তাকে বলেছি, ‘আমরা মনে করি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন চমৎকার প্রেসিডেন্ট হবেন এবং তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমাদের দেশের এই জটিল মুহূর্তে, নভেম্বরের নির্বাচনে তার জয় নিশ্চিত করতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব। আমরা আশা করি, আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। বুধবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কমলা হ্যারিসকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন অভিনেতা ও ডেমোক্র্যাটিক তহবিল সংগ্রহকারী জর্জ ক্লুনি। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কমলা হ্যারিসকে ‘মহান ভাইস প্রেসিডেন্ট’ বলে বর্ণনা করে বলেন, কমলা অভিজ্ঞ। তিনি কষ্টসহিষ্ণু এবং সক্ষম। তিনি আমার অসাধারণ সহযোগী এবং আমাদের দেশের একজন নেতা। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের, আমেরিকান জনগণের হাতে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন পিয়েরে জোর দিয়ে বলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে রয়টার্স/ইপসসসহ বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আগামী সাড়ে তিন মাস ট্রাম্প আর কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচার দুজনের জন্যই বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজ জাতীয় জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপে ৪৮ শতাংশ মার্কিন ভোটার ট্রাম্পকে এবং ৪৬ শতাংশ কমলাকে সমর্থন জানান। অথচ জুলাইয়ের শেষ দিকে একই প্রতিষ্ঠানের করা জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ শতাংশ ও বাইডেনের প্রতি ৪১ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছিলেন। অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে বাইডেন খারাপ করার পর ওই জরিপ চালানো হয়েছিল। দেশব্যাপী জনমত জরিপ মার্কিন নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্যের ফলাফল ইলেকটোরাল ভোটারের পুরো হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, সেটা অনেকটা নির্ভর করে এই কয়েকটি রাজ্যের ভোটের ওপর। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাট ডেলিগেটের (প্রতিনিধি) সমর্থন পেয়েছেন। আগামী আগস্টে দলীয় সম্মেলনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। ওদিকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে অকপট এবং গঠনমূলক আলোচনা করেন কমলা হ্যারিস। হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে কমলা বলেন, এই যুদ্ধ এখন বন্ধের সময় এসেছে। প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে কঠোর সুরে তিনি গাজায় হতাহতের বিষয়ে তার ‘গুরুতর উদ্বেগ’ স্পষ্ট করেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এ সময় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।