আলোচনায় ফের সংলাপ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল আগামী মাসের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকারসহ নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। দুদলই নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ দখলে রাখতে মরিয়া। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সংলাপ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপ হবে কিনা-এ নিয়ে জনমনে আগ্রহের শেষ নেই। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকেও অর্থবহ সংলাপের তাগাদা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের ঢাকা সফর ও তাদের সুপারিশের পর সংলাপ ইস্যু আবার আলোচনায় এসেছে। তবে সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী মহলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য শর্তের বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপির নেতারা বলছেন-নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ঘোষণা দিয়ে আলাপের কথা বললে আমরা তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব। এছাড়া আর কোনো বিষয়ে আলোচনা বা সংলাপ হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন-বিএনপির সঙ্গে শর্তযুক্ত সংলাপ হতে পারে না। সংলাপ চাইলে শর্ত থেকে বিএনপিকে সরে আসতে হবে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করব। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভালো নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দূরত্ব ঘোচাতে একমাত্র কাজ হলো আলাপ-আলোচনা।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সংলাপ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে তো আমরা দেখি না। দুদলের কথাবার্তার মধ্যে একটা যুদ্ধাংদেহি মনোভাব বিরাজ করছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। তিনি বলেন, তবে সংলাপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংলাপ খুব জরুরি। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। বিশ্ববাসীর অনেক আগ্রহ। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে হবে। এজন্য একমাত্র উপায় হলো-আলাপ-আলোচনা করা।
বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে। পাঁচ দিনের সফর শেষে প্রতিনিধিদল জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের আহ্বানের পর রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শর্তযুক্ত সংলাপে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপি শর্ত প্রত্যাহার করলে তখন দেখা যাবে। একইদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশে সংবিধান আছে এবং সেই সংবিধানে বলা আছে-নির্বাচন কীভাবে হবে। দেশে আইন আছে। সংবিধান ও আইন মেনে নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে বা প্রচলিত আইনের বাইরে কোনো সংলাপ হতে পারে না। সংবিধান ও আইন মেনে কেউ নির্বাচনে এলে আলোচনারও প্রয়োজন থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই (দিস ইজ ওয়েলকাম)। তিনি বলেন, সব সময় বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমরা সংলাপ করে যাচ্ছি। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা যদি চায়-তারাও সংলাপ করুক। এটার সঙ্গে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা-একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন; ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার নির্বাচিত করতে চায়।? একটা দখলদার ও অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে বিএনপির যাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরাবর আমরা বলে আসছি-নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে না। এটি বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া।
এর আগে বুধবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে না। এ ব্যাপারে আলোচনায় প্রস্তুত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সেটা আমরা আগেও বলেছি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি। তবে তারা যদি সেই ঘোষণা দেয়, আমরা মেনে নেব।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।