ইইউতে অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি কঠোর হচ্ছে


অবশেষে নতুন অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি গ্রহণে প্রস্তাব পাস হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে হওয়া ভোটে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক নতুন নীতির প্রস্তাব পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে অঞ্চলটির দেশগুলোতে অভিবাসী ও শরণার্থী হিসেবে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালার মুখোমুখি হতে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলো অভিন্ন অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি গ্রহণ নিয়ে কাজ শুরু করে। অঞ্চলটির কিছু দেশ নিজেদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সামনে আসে। অবশেষে দীর্ঘ আলোচনার পর এ সম্পর্কিত নীতির প্রস্তাবটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হলো। অবশ্য এ নীতি আগামী দুই বছর সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হবে। ভিসানীতি কঠোর করছে নিউজিল্যান্ডও ভিসানীতি কঠোর করছে নিউজিল্যান্ডও এ নীতির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়ার গতি বাড়বে। পাশাপাশি অবৈধ বলে বিবেচিত অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশেও দ্রুততার সঙ্গে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। একইসঙ্গে শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে অঞ্চলটির দেশগুলোকে আলাদাভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। বিবিসির দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর ইইউ সীমান্ত পার হয়ে অঞ্চলটিতে প্রবেশ করে ৩ লাখ ৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসী। ২০১৬ সালের পর এ সংখ্যাই সর্বোচ্চ। ইইউ জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোকে এই নীতি মেনে চলার বিষয়ে আবশ্যিক ঐক্য প্রদর্শন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ভোটে পাস হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পৌঁছাতে অবশ্য আরও কিছু সময় লাগবে। চলতি মাসের শেষদিকে এ বিষয়ে আরেকটি ভোট হবে। সেখানে পাস হলেই বিষয়টি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাবে। প্রস্তাবিত নীতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ইতালি, গ্রিস, স্পেনের মতো দেশগুলোতে প্রবেশ করা শরণার্থীদের অন্য দেশগুলো হয় ভাগ করে নিতে হবে, অথবা সেই সব শরণার্থীর ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ, শরণার্থী বিষয়ক দায় শুধু আর এই কয়েকটি দেশের ঘাড়ে থাকবে না। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশকেই এ দায় নিতে হবে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, শরণার্থী হিসেবে গ্রহণের সুযোগ কম—এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শরণার্থী হতে আবেদন করা ব্যক্তিকে এমনকি ইউরোপে প্রবেশের আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি যেকোনো আশ্রয় আবেদন ১২ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আশ্রয় আবেদন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একই সময়ের মধ্যে জোরপূর্বক তার নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। শুধু শরণার্থী নয়, ইউরোপে অভিবাসী হতেও বড় ধরনের যাচাই–বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। প্রস্তাবিত নীতিটি পাস হলে সাত দিনের মধ্যে অভিবাসন আবেদনের নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইইউ অঞ্চলে প্রবেশের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাড়তি যাচাই–বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিচয়–সংক্রান্ত বিষয়াদি। ছয় বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ডেটা পরীক্ষা করা হবে। এ ধরনের অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তা মোকাবিলায়ও ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে। ইইউ অঞ্চলে এই অভিবাসননীতি নিয়ে মূলত দুটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী কাজ করেছে। এর একটি মধ্যডানপন্থী ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) গ্রুপ ও অন্যটি মধ্যবামপন্থী প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস (এসঅ্যান্ডডি)। আগামী জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এ দুটি দলই বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন অভিবাসননীতিকে স্বাগত জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ একে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন। আর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্তা মেতোসলা একে ‘ঐক্য ও দায়বোধের মধ্যে ভারসাম্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।