ইউনূসের প্রতিষ্ঠান দখলচেষ্টার প্রতিবাদে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদখলের চেষ্টার প্রতিবাদে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি নোবেল জয়ী ইউনূস প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবরদখলের চেষ্টা সংক্রান্ত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। তারা বলেন, গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমসহ ড. ইউনূসের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনধিকার ও জোরপূর্বক প্রবেশ এবং ভবনটির সামনে রাজনৈতিক সমাবেশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম সাইফুল মজিদ সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এর মধ্যে ড. ইউনূসের পরিবর্তে তিনটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে সাইফুল মজিদ নিজের লেখা চিঠিতে তিনি নিজেই মনোনীত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনার এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই বলে ইউনূসের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এরপরেও এ বিষয়ে কোনো আইনি দাবি থাকলে তা আদালতে উপস্থাপন করা যেত। কিন্তু সেটি না করে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় ইউনূসের প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা বেআইনি, অনৈতিক ও অরুচিকর বলে আমরা মনে করি। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ যেসব একতরফা, বেপরোয়া ও মানহানিকর অভিযোগ করেছেন আমরা তার নিন্দা করছি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইতোপূর্বে হিসাব তলব, তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে ড. ইউনূসকে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়রানি করেছে। শ্রম আইন সংক্রান্ত দেওয়ানি চরিত্রের একটি অভিযোগকে ফৌজদারি মামলা হিসাবে নিয়ে তা অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনা থেকে ইউনূসের প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাকে পৃথকভাবে দেখার সুযোগ নেই। ড. ইউনূস অতিদরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে বিশ্বে সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন। আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মোড়কে তার, এবং তার গড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা গ্রহণ, তার কর্মযজ্ঞকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে বিশ্বের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ড. ইউনূসের গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদখলের চেষ্টাসহ তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সব পদক্ষেপ বন্ধে আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিদাতারা হলেন মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক স্বপন আদনান, অধ্যাপিকা ফিরদৌস আজিম, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অধ্যাপিকা শাহনাজ হুদা, মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ, শিরিন হক, সঞ্জীব দ্রং, জাকির হোসেন, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, ফরিদা আখতার, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নায়লা জেড খান, নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. নাসরিন খন্দকার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ও আর রাজী, গবেষক রোজিনা বেগম, সাংবাদিক সাদিয়া গুলরুখ, আইনজীবী সালমা আলী, তবারক হোসেইন, সুব্রত চৌধুরী, অরূপ রাহী, রেজাউর রহমান লেনিন এবং ব্যাংকার সৈয়দ নাসের বখতিয়ার আহমেদ