ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ -এ পদার্পণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি


স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শুক্রবার ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে পা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষা-বিনির্মাণে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এই বিদ্যাপীঠ। এখানে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও ভাবনাগুলো পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো : সেশনজট যেন এক দানবীয় অভিশাপ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আজকের এই দিনে ২২ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্ত জ্ঞান চর্চার এই বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু তার শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে না, আলোকিত করে পুরো এক জাতিকে। এটি শুধু প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আমরা জ্ঞান অর্জন করি, বন্ধু তৈরি করি এবং ভবিষ্যৎ তৈরি করি। প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে পদার্পণ করলেও, বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়েই যেন প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। রয়েছে সেশনজটের গøানি। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ভুগছে জীবন নিয়ে হতাশায়। সেশনজট যেন এক দানবীয় অভিশাপ। এমন সমস্যায় শিক্ষার্থীরা যেন আর ক‚ল খুঁজে পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ভিসি মহোদয় এবং প্রশাসনের কাছে একটাই চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ফিরে পাওয়ার পেছনের প্রধান অন্তরায় গুলো আশু সমাধান করে প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তুলুন। প্রত্যাশা-প্রাপ্তির কথাগুলো বলেছেন ইবি’র ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার সুযোগ প্রদান : ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর আজিজুল ইসলাম বলেন, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যাম্পাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি ঋতুতে এই ক্যাম্পাস সেজে উঠে নবরূপে, নতুন বৈশিষ্ট্যে। সাথে সাথে বদলায় রং, রুপ, লাবণ্য। নির্মল প্রকৃতির শোভিত প্রাণের ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পায় ভালোবাসার বসন্ত। যেন শরতের শুভ্রতায় ছুঁয়ে যায় মন। বর্ষার বাদলে শীতল পানির অবগাহনে প্রাণ ফিরে পায় সবুজ প্রকৃতি।প্রথম দর্শনে যে প্রণয়ে হৃদয় গেঁথেছি বসুধার কোনো শক্তিই সেটা মুছে ফেলার সক্ষমতা রাখে না। অবারিত নৈসর্গিক শোভায় শোভিত ইবি ক্যাম্পাসে নানা প্রজাতির ফুলের সুবাস আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। তাই আমার ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ হিসেবে অতি আনন্দে বলতে পারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আমি দৃঢ়ভাবে একটি স্বপ্ন লালন করি আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে অধিকতর শিক্ষার্থী বান্ধব। শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার সুযোগ প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পর্যাপ্ত প্রসার সাধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। শীর্ষদের তালিকায় থাকার কথা থাকলেও ইবি আজও পিছিয়ে : হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শেখ ছামিউল ইসলাম বলেন, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। প্রথমে ধর্মত্বত্ত¡ বিভাগ নিয়ে চালু হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য বিভাগ চালু করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার পর প্রথম প্রতিষ্ঠিত হলেও আজও অনেকদিক থেকেই পিছিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে এর পরেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গুণে, মানে এবং তালিকায় রয়েছে অনেক উপরে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থার সংকট, হলের খাবার খুবই নিম্নমানের যা হলের নির্ধারিত মূল্যের সাথে মানানসই না। এছাড়াও অনেক বিভাগেই রয়েছে সেশনজট। অনেক বিভাগেই শিক্ষার্থীদের সম্মাননা শেষ করতে ৫-৬ বছর লেগে যায় যা শিক্ষার্থীদের জীবনে মূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। পাশাপাশি রয়েছে ক্লাসরুমের সংকট এবং শিক্ষক সংকট। অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লাস করতে পারে না। এছাড়াও শিক্ষকদের অবহেলা সেশনজটের অন্যতম কারণ। তবে সময়ের সাথে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। হচ্ছে নতুন আবাসন ব্যবস্থা, একাডেমিক ভবন সহ নানা স্থাপনা। এই আশা রাখি এক সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে, থাকবে শীর্ষ তালিকার ভিতর। চিকিৎসা সেবার যথেষ্ট ঘাটতি : ইংরেজি বিভাগের আফরিন আক্তার মৌ বলেন, দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে এই ১৭৫-একরে যখন পদার্পণ করে তখন নানা প্রতিক‚লতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যেমন আনন্দিত, উদ্বেলিত হয় ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশ, সেশন জট, আবাসনের সুব্যবস্থা না থাকা, বিশেষ করে মেয়েদের আবাসনের সুব্যবস্থার অভাব (বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই হলে থাকতে না পারা), চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকলেও তার মধ্যে যথেষ্ট ঘাটতি থাকা, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধীরগতি ইত্যাদি বিষয় তাদের কল্পিত ভাবনা থেকে কয়েকগুন দূরে অবস্থান করে। এত কিছুর মধ্যেও এই ২৪-এ নতুন করে স্বাধীনতা অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছে যা তাদের কাছে অভাবনীয় প্রাপ্তি। ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ দিতে পারার প্রত্যাশা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বিরাজমান। যেমন দেখতে চাই আমার বিশ্ববিদ্যালয় : ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এর শিক্ষার্থী ফারাহানা লিমু এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে একজন নবীন ছাত্রী হিসেবে অনেক আশা ও আবেগ রয়েছে আমার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সেশন জট। যার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। উচ্চমানের শিক্ষক নিয়োগ ও যথাযথ পাঠদানের মাধ্যমে সেশন জট কমাতে হবে। প্রাসঙ্গিক শিক্ষাব্যবস্থা যা চাকরি ও উচ্চতর গবেষণায় সাহায্য করবে। এমনকি শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন অতিব জরুরী। এ সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নের আশা রাখি। প্রসঙ্গক্রমে ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, বিপ্লব পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় যেন নবরূপে আলোর পথে ধাবিত হয়েছে। তবে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, ভর্তি সংক্রান্ত ভোগান্তি, সনদ উত্তোলনে জটিলতা, কেন্দ্রীয় পরিচয় পত্রের অভাব, আবাসিক সিটের অপর্যাপ্ততাসহ বেশ কিছু সমস্যা এখনো বিদ্যমান। এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আশা করি, অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি পূর্বক, দ্রæত এসকল সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে এগিয়ে যাবে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্ধডজন মামলা বাতিল স্টাফ রিপোর্টার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে মানহানির অভিযোগে ময়মনসিংহ এবং ঢাকার শ্রম আদালতে করা ৬ মামলা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে শ্রম আদালতের পাঁচটি ও মানহানির একটি মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন হাইকোর্ট। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর পৃথক আদেশে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ। স¤প্রতি এসব রায় প্রকাশ পায়। ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশী এক সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা কেবল অর্থের জন্য রাজনীতি করেন। এখানে কোনো আদর্শের ব্যাপার নেই। তার এ মন্তব্যে সংক্ষুব্ধ হয়ে ময়মনসিংহ জেলা জাসদের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম চুন্নু ওই বছরের ২১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের আদালতে একটি মানহানি মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ওই মামলায় সমন জারি করলে ড. ইউনূস মামলা দায়েরের ৪ বছর পর ওই আদালতে হাজির হয়ে মুচলেকা দিয়ে জামিন নেন। পরে ২০১১ সালে এ মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। ওই সময় হাইকোর্ট মামলা বাতিলে রুল জারি করেন। শ্রম আদালতের পাঁচ মামলা: ২০১৯ সালের ৩ জুলাই ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স থেকে চাকরিচ্যুত সাবেক তিন কর্মচারী। তারা হলেন, আব্দুস সালাম, শাহ আলম, এমরানুল হক। একই বছর হোসাইন আহমেদ ও আব্দুর গফুরও মামলা করেন। এসব মামলা বাতিল চেয়ে ২০২০ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তখন হাইকোর্ট মামলা বাতিলে রুল জারি করেছিলেন। পৃথক শুনানি শেষে গত ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন।