ই-জিপির কার্যকারিতা
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক
কয়েক বছর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ই-জিপির ফলে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়লেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাজের মানোন্নয়নে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। ই-জিপির ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতির কথাও তিনি তখন উলেখ করেছিলেন। এক্ষেত্রে এখনো বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন : বাংলাদেশে ই-জিপির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক যোগসাজশ হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) এখনো প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার ৩০ শতাংশ ই-কনট্রাক্ট নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাজারে তাদের আধিপত্য বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন, এমন দরপত্রের মাধ্যমে গত ১১ বছরে ৬০ হাজার ৬৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। বস্তুত এ ধরনের চর্চায় দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে। ই-জিপি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, যা অর্থ ও সময় সাশ্রয় করেছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে কেন প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায়নি, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ইজিপির আওতার বাইরে থাকা উচ্চ চুক্তিমূল্যের সব দরপত্র দ্রুততার সঙ্গে ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় আনা; সরকারি ক্রয় প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি এবং সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে আরোপিত মূল্যসীমা প্রত্যাহার করা-এসব বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে টিআইবির সুপারিশে।
সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণের বর্তমান ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজিয়ে সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতে এবং সম্ভাব্য যোগসাজশ বন্ধে একক দরপত্রপ্রবণ ক্রয় অফিসগুলোকে নজরদারিতে আনার আহ্বানও জানিয়েছে টিআইবি।
ই-জিপিকে যোগসাজশমুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক করার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার। বস্তুত ই-জিপিকে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করা কেন জরুরি তা বহুল আলোচিত। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে স্বচ্ছতার স্বার্থে টিআইবির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি এবং জনগুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা না করেন, তাহলে এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।