ঈদের আগে ফের আগুন


দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটারের, মাঝে সময়ের ফারাক ১০ দিনের। রাজধানীর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের যে ধ্বংসযজ্ঞ তাড়া করে ফিরছে, একই কষ্টের রোদন এখন নিউ সুপারমার্কেটে। ঈদের আগে আবারও সর্বগ্রাসী আগুন, এবার সর্বস্বান্ত জনপ্রিয় নিউ সুপারমার্কেটের কয়েকশ ব্যবসায়ী। পহেলা বৈশাখের পরদিন এমন এক দুঃসংবাদে জাগল ঢাকা। দিন সাতেক পরই ঈদ। এ সময়ে দারুণ জম্পেশ নিউমার্কেট এলাকা। কয়েক দিন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড়ভাট্টা, কেনাবেচা। এক আগুনে সব স্পন্দনই যেন থেমে গেল। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ঈদের আগে মার্কেটটি আর খোলার সম্ভাবনা নেই। তবে ওই এলাকার অন্য সব মার্কেট আজ রোববার থেকে ফের খোলার কথা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গতকাল শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপারমার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ২৮ ইউনিটের সদস্যরা সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে তখনও মার্কেটের ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখা যায়। আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে বলেছে তারা। ঈদের আগে বেচাকেনার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। আগুন ছাই করে দিয়েছে সব। পুড়েছে কয়েকশ দোকান। নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গেছেন দোকান মালিকরা। নিউ সুপারমার্কেটে মূলত সবই কাপড়ের দোকান। এখানে শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবিসহ নানা ধরনের কাপড় ছিল। এ ছাড়া খেলনা, জুতা, আসবাবপত্রসহ নানা ধরনের পণ্য ছিল। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, র‍্যাব, আনসার সদস্যরা যোগ দেন আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়ীদের মালপত্র উদ্ধারকাজে। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। ফায়ার সার্ভিস নিউ সুপারমার্কেটের তৃতীয় তলার ছাদ ফুটো করেও অন্য তলায় পানি সরবরাহ করে। এ ছাড়া ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজের পুকুরসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন সোর্স থেকে পানি নেওয়া হয়। এ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২১ জন ফায়ার সার্ভিসের, দু’জন আনসার, একজন বিমানবাহিনীর, একজন সাংবাদিক, দু’জন স্বেচ্ছাসেবক ও একজন স্কাউট রয়েছেন। পরপর বড় দুই মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত ছিল একই সময়ে; ভোরের দিকে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা– এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি মার্কেটকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। তাদের মার্কেটের যে অবস্থা সেখানে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে, কিন্তু পরপর চারটি ঘটনাকে যদি আমরা দেখি, তাহলে এটা কি আদতেই কোনো দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে। ব্যবসায়ীরা জানান, নিউ সুপারমার্কেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে নিবন্ধিত দোকান ১ হাজার ২২৪টি। তবে বাস্তবে সেখানে দেড় হাজারের মতো দোকান। এ ছাড়া মার্কেটের ভেতরে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁটার পথ দখল করেও দোকান বসিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যবসায়ীদের ধারণা, তিনতলা মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, তদন্ত শেষ করার আগে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও কোন স্থান থেকে ছড়িয়েছে, তা নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের নিচতলা ও দোতলার দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে নষ্ট হয়েছে অনেক দোকানের মালপত্র। রাত ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেনি। আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মত ২০২০ সালে নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটের পাশের ফুট ওভারব্রিজ ঝুঁকিপুর্ণ ঘোষণা করে ডিএসসিসি। বছরখানেক আগে এই ফুট ওভারব্রিজটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। ঢাকা নিউ সুপারমার্কেট ও বিপরীত পাশে গাউছিয়া মার্কেটটি সংযুক্ত করেছে এই ফুট ওভারব্রিজ। সপ্তাহখানেক আগে ডিএসসিসির কর্মীরা সেটি ভাঙতে গেলে ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। পরে দু’দিন আগে তাঁরা ব্রিজের দুই পাশের চারটি সিঁড়ি ভেঙে দিয়ে যান। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে ফের ব্রিজটি ভাঙার জন্য যান ডিএসসিসি কর্মীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভোর ৪টার পর নিউ সুপারমার্কেটের প্রান্তে ব্রিজ ভাঙা শুরু হয়। ভাঙার সময় শর্টসার্কিট থেকে এ ‌আগুন লেগেছে। ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ফুট ওভারব্রিজ হয়ে গাউছিয়া মার্কেটের দিকের ক্রেতারা নিউ সুপারমার্কেটে আসেন। ঈদের আগে ব্রিজটি ভাঙা হলে ক্রেতারা আসতে পারবেন না। এ কারণে ঈদের পর ভাঙার জন্য তাদের অনুরোধ ছিল। তারা তা শোনেনি। নিউ সুপারমার্কেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সাগর বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন ফুট ওভারব্রিজ ভাঙার সময় ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। নিউ সুপারমার্কেট-সংলগ্ন ঢাকা নিউমার্কেট। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, একজন নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে তিনি শুনেছেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন ফুট ওভারব্রিজটি ভাঙার সময় মার্কেটে ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো হয়। এ সময় ওই নিরাপত্তাকর্মী দৌড়ে গিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের সুইচ বন্ধ করে দেন। সুইচ বন্ধ না করলে মার্কেটের পুরো অংশ পুড়ে যেত। আগুনের সময় অনেক ব্যবসায়ী নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নগদ টাকা এবং পোশাক বের করে এনেছেন। ঈদের আগে নিঃস্ব নিউ সুপারমার্কেটের সামনে তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়াচ্ছিলেন পারভীন বেগম। দু’চোখের আঙিনায় জমেছে বেদনার জল। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা এহন ক্যামনে থাকুম, ক্যামনে খামু। ও ভাইগো সব শেষ হয়ে গেল।’ তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেলে বাদশা ও নাতি তুষার মিলে দোতলায় কাপড়ের দোকান ছিল তাঁদের। সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মালপত্র পুড়েছে। এ ছাড়া আগুনে পুড়তে থাকা দোকানের ক্যাশ বাক্সতে মালিকের ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল। জীবন বাজি রেখে সেই টাকা উদ্ধার করে মালিকের হাতে তুলে দেন দোকান কর্মচারী মো. জীবন। টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে ‘নেক্সট লেভেল’ নামে ওই দোকানকর্মী জীবন এখন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। জীবন বলেন, ‘আমাদের দোকানে ঘড়ি, সানগ্লাস, ওয়ালেট, চশমা বিক্রি করা হয়। শনিবার আড়াইটার দিকে দোকান বন্ধ করেছিলাম। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মালিক ফোন করে আগুনের খবর দেন। পরে মালিকসহ আমরা ৭-৮ জন মার্কেটে আসি। তখন জানতে পারি, দোকানের ক্যাশ বাক্সে প্রায় ২ লাখ টাকা আছে। মালিক সবার কাছে টাকা উদ্ধারে অনুরোধ করেন। তিনি নিজেও চেষ্টা করেন। আমাদের অনুরোধে গ্লাস ভেঙে দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তার পর আমি ভাঙা জানালা দিয়ে দোকানে ঢুকি। তখনও আমাদের দোকানে আগুন সেভাবে লাগেনি। ক্যাশবাক্সের তালা খুলে ড্রয়ারসহ বের করে জানালা দিয়ে মালিকের কাছে ছুড়ে দেই। ততক্ষণে দোকানে অনেক ধোঁয়া তৈরি হয়ে যায়। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাড়াহুড়ো করে নামার সময় ভাঙা গ্লাসে আমার পা কেটে যায়।’ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মার্কেটটির সামনের ফুটপাতের দোকানিরাও। মার্কেটটির তিনতলায় আছে সহোদর শাকিল ও রবিনের যৌথ দোকান। তাঁরা বেসলেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। আগুনের খবর শুনে তাঁদের মা জান্নাতুল ফেরদৌস স্বপ্না ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর আর্তনাদ, ‘দুই ছেলের আয়ে সংসার চলে। সব শেষ হয়ে গেল। ঈদের আগে এমন ক্ষতি কীভাবে সহ্য করব।’ দোকান মালিক সাইফুল ইসলার রফিক জানান, ওই মার্কেটে তাঁদের পাঁচ ভাইয়ের পাঁচটি দোকান আছে। আগুনের খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসে দোকান পর্যন্ত পৌঁছান। তবে দোকানের সাটার প্রচণ্ড গরম থাকায় তিনি খুলতে পারেননি। ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন ফুটপাতে বসে আর্তনাদ করছিলেন। জানালেন, মালপত্রের পাশাপাশি তাঁর নগদ দুই লাখ টাকা পুড়েছে। শুক্রবার রাতে বেচাকেনা করে ওই টাকা দোকানে রেখে গিয়েছিলেন। আট লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দোকানের মালপত্র তুলেছিলেন। সব মিলিয়ে ১৫ লাখ টাকার মতো মালপত্র ছিল। সব পুড়ে গেছে। আশপাশের মার্কেট বন্ধ নিউ সুপারমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে আশপাশের অন্তত অর্ধশত মার্কেটে। ছুটির দিন শনিবার ঈদের বেচাকেনায় যখন গমগম থাকার কথা, তখন এসব মার্কেটে ঝুলছিল তালা। যে মার্কেটে আগুন লাগে, এর ঠিক উত্তরে চন্দ্রিমা সুপারমার্কেট, দক্ষিণে লাগোয়া মূল নিউমার্কেট। পশ্চিমে কাঁচা বাজার মার্কেট। এ ছাড়া বিপরীত পাশে মিরপুর রোডের গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নুর ম্যানশনসহ কয়েকটি মার্কেট। সড়কের আরেক পাশে আধা পাকা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের উত্তর দিকে ঢাকা কলেজের সামনে গ্লোব শপিংমল, বদরুদ্দোজা সুপারমার্কেট, ইয়াকুব সুপারমার্কেট, নুর জাহান সুপারমার্কেট, গোল্ডেন সুপারমার্কেট, নেহার ভবন শপিং সেন্টার, প্রিয়াঙ্গন মার্কেট। শনিবার সব দোকানই বন্ধ ছিল। নিউ এলিফ্যান্ট রোডের কিছু কিছু দোকান-মার্কেট খুললেও দুপুরে ক্রেতা ছিল কম। তবে নীলক্ষেতে বই মার্কেটের কিছু অংশ খোলা ছিল। নিউ সুপারমার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ থাকায় গতকাল ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারেননি। রাস্তা বন্ধ থাকায় যানবাহন চলাচলও ছিল সীমিত। সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কটি গত রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিউমার্কেটের এখানে আলাদা ব্লকে পাঁচটি মার্কেট রয়েছে। সব মার্কেটের সমিতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা। আজ রোববার সকাল থেকেই মূল মার্কেট খোলা হবে। পোস্টার থেকে ছড়িয়েছে আগুন ঈদের পরই নিউ সুপারমার্কেট বণিক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এতে পুরো মার্কেটে ছেয়ে ছিল প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে। এসব পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে মার্কেটটিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ও ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল রেজাউল করিম গত রাত সাড়ে ৯টায় নিউমার্কেটে এক স্পট বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মার্কেট ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। আগুন লাগার সময় সব দোকানের সাটার আটকানো ছিল। ফলে দোকানের ভেতরের তুষের আগুনের মতো কাপড়গুলো জ্বলছে। আমরা মার্কেটের প্রতিটি দোকান পরীক্ষা করছি, তাই আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অগ্নিকাণ্ডে ২৫০-৩০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিএসসিসির ব্যাখ্যা মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন লাগা নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ডিএসসিসি। সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকা নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত ফুটওভার ব্রিজটি গত বছরই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ডিএসসিসি। তখন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফলক ঝুলিয়ে সেতুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে সেই প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে লোকজন চলাচল করছিল, যা অত্যন্ত অনিরাপদ। এই অবস্থায় ১২ এপ্রিল সেই সেতুর মার্কেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত ২টা থেকে ভোর সোয়া ৫টা পর্যন্ত সেতুটির সঙ্গে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিটি করপোরেশন ওই দিনের মতো কার্যক্রম শেষ করে। এদিকে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। আগুনের সূত্রপাতের সময় থেকে আধা ঘণ্টারও বেশি আগে সেতুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন কাজে দৃশ্যত ও অদৃশ্য কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। নাশকতা কিনা খতিয়ে দেখা দরকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে নিউমার্কেটের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তাঁর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল– একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, এটা নাশকতা কিনা। জবাবে মাইন উদ্দিন বলেন, ‘একের পর এক আগুন লাগছে। এমন কিছু আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশকে অনুরোধ করব।’ ব্যবসায়ীদের দোকানের মালপত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা ৪ নম্বর গেটের পাশের ফুটওভার ব্রিজ ভাঙার সময় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে– ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই।’ মালপত্র চুরির অভিযোগ আগুন লাগে নিউ সুপারমার্কেটের পূর্বপাশে, তৃতীয় নতলায়। দোতলা ও নিচতলায় আগুন না ছড়ালেও ধোঁয়া এবং পানিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকান থেকে মালপত্র বের করে নিরাপদ দূরত্বে রাখেন। এ সময় মালপত্র চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি বুটিকসের পোশাক বিক্রি করেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি মার্কেটের পশ্চিম পাশ দিয়ে ঢুকে দোকানের কাছে যান। দেখেন, দোকানের তিন ভাগ পোশাক পুড়ে গেছে। তিনটি বস্তায় কিছু ভরে ওপর থেকে নিচে ফেলেন। পরে নিচে এসে সেই মালপত্র পাননি তিনি। কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না কর্মচারীরা আগুনে মার্কেটের যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের দোকানের কর্মচারীরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাবেন না বলেই ধরে নিয়েছিলেন। তাঁরা বলছেন, মহাজনের কাছে এই অবস্থায় টাকা চাইব কী করে? তৃতীয় তলার একটি প্যান্টের দোকানের কর্মচারী শরিফ হোসেন বলেন, ‘আমার মালিকের দোকানের সব প্যান্ট পুড়ে গেছে। তার কাছে ঈদের আগে টাকা চাইতে পারব না। আবার টাকার অভাবে ঈদে কেনাকাটাও করতে পারব না।’