উত্তরায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুম-হত্যাচেষ্টার মামলা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
এবার গুম-অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরায় পলাতক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নির্দেশ দাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী এক আইনজীবি।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সতত্য এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান। এর আগে গত সোমবার (১৯ আগস্ট) আদালতের নির্দেশে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন মো. সোহেল রানা নামের ভুক্তভোগী ওই আইনজীবি।
মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামীরা হলেন আত্মগোপনে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৪), সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (৬৮), পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক (৪), সাবেক র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫জন।
এজাহারসূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৫ নম্বর সেক্টরের ১নং রোডের স্মাইল গ্যালারি নামের একটি শো-রুমের সামনে থেকে রাত আটটার দিকে ওই আইনজীবি ও তার সঙ্গে থাকা বন্ধু মো. আশরাফুল ইসলাম রিংকুকে ১০/১১জন বন্দুকধারী র্যাবের একটি স্টিকারযুক্ত গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে ও পিছমোড়া হাতকরা পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
মামলায় বলা হয়, সেদিন তাদেরকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়ার পর গাড়ির ভেতর ওই বন্দুকধারীরা ডিজে গান চালিয়ে ভুক্তভোগীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। এমনকি ভুক্তভোগী আইনজীবি সোহেল রানার গোপণাঙ্গে বৈদ্যুতিক ক্লিপ লাগিয়ে শক দেয়া হয়।
গুমের শিকার ওই ভুক্তভোগী জানায়, ঘন্টাখানিক নির্যাতনের পর গাড়িটি একটা বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয় এবং তাকে টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে সবুজ পর্দার বেষ্টনী সম্বলিত একটি খুপড়ি ঘরে রাখা হয়। সেখানে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেককেই রাখা হয়েছিল বলে এজহারে উল্লেখ করেন তিনি।
এজহারে বলা হয়, সেসময় জিজ্ঞাসাবাদে বাদীকে এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় বেগম খালেদা জিয়াকে গালমন্দ করে আর বলতে থাকে- এমন চরিত্রহীন মহিলার দল করছ আর তোরা সরকার উৎখাত করবি।
এই বলে ভুক্তভোগীর পুরষাঙ্গে ও কানের লতিতে ক্লিপ লাগিয়ে পুনঃরায় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয় এবং দুই হাতে রশির মাধ্যমে উপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত শক্ত বস্তু দিয়ে তাকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত মামলার তথ্য বলছে, দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আটক থাকার পর ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন রাজশাহী গোদাগাড়ি এলাকায় চোখ বাধা অবস্থায় ছাড়া পান ওই ভুক্তভোগী। ছাড়ার সময় কতিপয় ব্যক্তিরা তাকে বিএনপির রাজনীতি এবং আইন পেশার সাথে যুক্ত না থাকার শর্তে ছেড়ে দেয়। অন্যথায় তাকে পরিবারসহ চিরতরে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ১নং আসামী শেখ হাসিনার হুকুমে এবং ২ থেকে ৫নং আসামীদের নির্দেশে অন্যান্য আসামীরা দেশে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতেই ভুক্তভোগী মো. সোহেল রানাকে গুমের নামে অপহরণ ও বিনা বিচারে আটকে রাখে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী আইনজীবি মো. সোহেল রানা বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে করে ভবিষ্যতে কোন সরকারই গুমের রাজনীতিতে জড়াতে না পারে এবং সেই সাথে আমি গুম প্রতিরোধে সরকারের প্রতি আইনপ্রণয়নের দাবি জানাই। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক অপরাপর আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের দিকেই যাচ্ছি। এ নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবাটুকুই দিবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।