একদফার ঘোষণাকে ‘গতানুগতিক’ বলছে আ.লীগ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বিএনপির একদফার আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নয় ক্ষমতাসীনরা। বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের এই ঘোষণাকে ‘গতানুগতিক’ আখ্যায়িত করে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও আদর্শিক মিত্র ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। রোববার নেতারা বলেছেন, এটা (একদফা আন্দোলনের ঘোষণা) আমাদের কাছে উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নয়। এটি একটি গতানুগতিক ঘোষণা। তারা তো আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছে। বিএনপির এই এক দফার আন্দোলনের পালটা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তারা।
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় একদফার আন্দোলন ঘোষণার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। দলটির নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন, ১২ জুলাই একদফার আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্থায়ী কমিটির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানোর অভিন্ন দাবিতে বিএনপির মিত্ররাও আলাদা মঞ্চ থেকে একদফার এই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির এই আন্দোলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শনিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা একটা ঢেউও তো জাগাতে পারেনি। ৩২ দলের এই জগাখিচুড়ির ঐক্যে একদফার আন্দোলনের পতন অনিবার্য। যে লক্ষ্য নিয়ে জগাখিচুড়ির এই ঐক্য তাতে ফল আসবে অশ্বডিম্ব। তিনি দাবি করেন, সরকার যেমন আছে, তেমনই থাকবে। সেতুমন্ত্রী পালটা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, তাদের আন্দোলনে নেতা কে? ক্যাপ্টেন ছাড়া কি জাহাজ চলবে? এই জগাখিচুড়ি ঐক্যে দফায় দফায় পরিবর্তন হয়েছে। এই ৩২ দল টিকবে কি না, এর গ্যারান্টি নেই। আগে তো ছিল ৫৪ দল।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আগস্ট মাসকে সামনে রেখে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের নামে কেউ যদি হত্যার পরিকল্পনা করে, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে জনগণের যদি সম্পৃক্ততা না থাকে, সেই আন্দোলন কখনো সফল হয় না। তারা যে একদফার আন্দোলনের কথা বলছেন, জনগণ তো ইতোমধ্যেই তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোনো আন্দোলনেই জনগণ তাদের সহযোগিতা করছে না। বছরের পর বছর তারা আন্দোলনের কথা বলছেন, অমুক দিন তমুক দিন করবেন। সেটা আমরা দেখেই আসছি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু একদফার আন্দোলনের ঘোষণার ব্যাপারে রোববার বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনে বিএনপির একদফার আন্দোলনের ঘোষণাটি ভয়ংকর রাজনৈতিক অপরাধমূলক একটি প্রস্তাব। কারণ এই প্রস্তাবের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দুর্যোগ ডেকে আনবে। আমরা এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন আলোচনার পথ খোলা আছে। তারপর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রাজপথেই সরকারের পরিবর্তন ঘটানো হবে। কিন্তু বিএনপি সেটা করতে পারেনি। এবারও তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। তাই আমি মনে করি, এটা একটি গতানুগতিক ঘোষণা।
১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বিএনপির একদফার আন্দোলনের এই ঘোষণাকে আমরা এমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে করছি না। তারা তো এমন কোনো আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি যে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। আসলে এই ধরনের ক্ষমতা এখন বিএনপির নেই। তাদের জন্য সরকারের পতন ঘটানো একটি দুরূহ ব্যাপার।
এদিকে সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক রোববার বলেছেন, তারা মনে করেন, নির্বাচন এলেই এই ধরনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, তাতে লাভ হয়েছে কি? ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত আন্দোলন করেছে বিএনপি, সবই একদফার ছিল। তাই এটি নতুন কিছু নয়। তারা বলছেন, রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে যা যা করণীয়, সবই করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে তারাও (আওয়ামী লীগ) পালটা কর্মসূচি দেবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির এই ধরনের (সরকার পতনে একদফার আন্দোলন) আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণায় আমরা চিন্তিত নই। তাদের (বিএনপির) যখন যে ধরনের কর্মসূচি আসবে, তা দেখে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।