একপক্ষীয় প্রার্থীদের লড়াই
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের অংশ না নেওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেকটাই একপক্ষীয় প্রার্থীদের মধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ। চার ধাপের মধ্যে এদিন প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। প্রায় সব উপজেলায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার আহবান জানিয়েছে।
বড় দুই দলের বিপরীতমুখী এমন অবস্থানের মধ্যে ভোটারদের নিরাপত্তায় এসব উপজেলায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ডের প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার সদস্য মাঠে রয়েছেন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন মোতায়েন থাকবেন। আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা ঠেকাতে বেশির ভাগ উপজেলায় আজ সকালে ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। ভোটগ্রহণ ঘিরে নির্বাচন কমিশন এমন কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তবুও ভোটারদের মধ্যে উৎসবের পাশাপাশি সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৭০টি উপজেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স টহল দিচ্ছে। প্রার্থীরা তাদের পোস্টার সাঁটানোসহ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পার্বত্য, দুর্গম ও চরাঞ্চল বিবেচনায় ২১ জেলার ৩৮টি উপজেলায় গতকাল ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। যে ২২টি উপজেলায় ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে, সেগুলোও কেন্দ্রে পৌঁছেছে। বাকি ৭৯টি উপজেলায় আজ ভোরে ব্যালট পেপার পৌঁছবে। এ নির্বাচনে ৫৭০ জন চেয়ারম্যান, ৬২৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪৪০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলিয়ে প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৩৫ জন।
নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা জানান, আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে। এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। প্রার্থী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত রাখায় দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের ছেলে ও ভাইসহ বেশ কয়েকজন স্বজনও মাঠে রয়েছেন। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিএনপির বহিষ্কৃত অন্তত ৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চেষ্টা করছেন। এর ফলে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে একদিকে যেমন উৎসব রয়েছে, তেমনি রয়েছে উৎকণ্ঠাও। একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যে টানটান উত্তেজনাও রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার থেকে নিবৃত্ত রাখতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা যাতে প্রভাব বিস্তার না করেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন আজ ভোটের দিন সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার কথাও তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ভোটে কনটেস্টটা একটু বেশি হয়ে থাকে। সেদিক থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উত্তেজনা স্থানীয় নির্বাচনে বেশি হয়ে থাকে। সেজন্য আমরাও সতর্ক অবস্থায় থাকি। যেন উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উত্তেজনা থেকে কোনো সংঘর্ষ-সহিংসতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।
গত ২১ মার্চ প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ২৩ এপ্রিল থেকে এ ধাপের নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়ে গত সোমবার রাতে শেষ হয়। প্রথম ধাপে ৮ জন চেয়ারম্যানসহ ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিবচর উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আইনগত জটিলতার কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর. নাঙ্গলকোট ও সরিষাবাড়ী, প্রশাসনিক কারণে থানচি ও বোয়াংছড়ি, ধাপ পরিবর্তনের কারণে কুমারখালী এবং প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে গোপালপুর ও মহাদেবপুর উপজেলায় আজ ভোটগ্রহণ হবে না। এসব বাদে বাকি ১৩৯টিতে আজ বুধবার ভোটগ্রহণ হবে। ওই ভোটেই নির্ধারিত হবেন আগামীর এসব উপজেলা জনপ্রতিনিধি কারা হবেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রথম ধাপে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪০ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০ হাজার ৪৯১টি ও ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৪ হাজার ২৬৩টি। উপজেলার আয়তন ও ভোটার বিবেচনায় প্রতিটি উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন বিজিবি মাঠে রয়েছেন। ১০টি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সার্বিক নিরাপত্তায় প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার সদস্য : ইসি জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রসহ উপজেলার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও কোস্ট গার্ডের প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৮২ হাজার ৭৩৩ জন, বিজিবি ১৪ হাজার ৬১০ জন, র্যাব ২৬৪৮ জন এবং আনসার এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন রয়েছেন। ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত বিচার আদালত পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা : ইসি জানিয়েছে, আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসারের বেশিসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকছেন। স্বাভাবিক এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন পুলিশসহ ১৮-১৯ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পার্বত্য ও দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পাঁচজন পুলিশসহ ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য কেন্দ্রের নিরাপত্তায় রয়েছেন।
আশঙ্কা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা : বিভিন্ন উপজেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বেশি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :
রাজশাহী : গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় ১৬৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ১৫৫টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সে হিসাবে মোট কেন্দ্রের ৯২ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। এ দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, এসব কেন্দ্রকে তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসাবে দেখছেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রে বাড়তি সতর্কতা থাকবে।
বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ : বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২০ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) চিহ্নিত করে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
টেকেরহাট (মাদারীপুর) : মাদারীপুরে সদর ও রাজৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৮৬ ভোটকেন্দ্রের সবকটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেই হিসাবে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) : কালীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নের ৯০টি ভোটকেন্দ্রের ৭০টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ সদর, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩২টি কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এসব কেন্দ্রের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ছয়টি, হোসেনপুর উপজেলায় ১৩টি ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় ১৩টি রয়েছে।
মতলব (চাঁদপুর) : চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার নির্বাচন আজ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মতলব উত্তরে হামলার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন ভোটাররা। ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করছে।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : বড়লেখা উপজেলার ৬৯টি ভোটকেন্দ্রের ২৯টি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।