এবারও ভোটের মাঠে চমক দেখালেন যেসব হেভিওয়েট
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় অনেক প্রবীন রাজনীতিবিদকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তবে বেশ কয়েক হেভিওয়েট প্রার্থী এবারও তাদের পুরনো সফলতার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
তাদের মধ্যে হলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
আরও পড়ুন: ভোট প্রত্যাখ্যান করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে, ৫ম বারের সংসদ সদস্য ও হুইপ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিউর রহমান আতিককে, হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী–বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীকে, পিরোজপুর-২ জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে।
শেখ সেলিম
একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার বিরল গৌরব অর্জন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সেই ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে যে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে আটবার ভোটে জয়ী হয়েছেন শেখ সেলিম। দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই। এবার ৯ম বারের মতো এমপি হলেন শেখ সেলিম।
তোফায়েল আহমেদ
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ ৮ বারের সংসদ সদস্য। দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১২ তম বারের মতো ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ১৯৭০ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ৫৩ বছর পর ৮০-তে পৌঁছেও দলীয় মনোনয়নে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ‘মুজিববাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন তিনি। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা নিয়ে গঠিত মুজিববাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এবারের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে চতুর্থবারের মতো টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন এই বর্ষীয়ান নেতা।
ফারুক খান
গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে টানা ৬ষ্ঠবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। জাতির পিতার জন্মস্থান হওয়ায় এটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এ জেলার তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীরাই বারবার জয়ী হয়েছেন।
ড. আবদুর রাজ্জাক
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ২০০১ সালে কর্মজীবন শেষ করে টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে (ধনবাড়ী-মধুপুর) এই আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ম বারের মতো সংসদ সদস্য হলেন ড. রাজ্জাক।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার
দিনাজপুর-৫ আসনে ৩৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি ১৯৮৬ সালে এই আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ধারাবাহিকভাবে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য হন তিনি।
নূর-ই আলম চৌধুরী
আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাদারীপুর-১ আসন। এখানে টানা ৩৩ বছর ধরে নৌকার একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন নূর-ই-আলম চৌধুরী। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে তার বাবা ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মারা যান। ওই বছর উপনির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন তিনি। এর পর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদের চিফ হুইফ নূর-ই-আলম। ২০২৪ সালে জয়ের মাধ্যমে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য হন প্রধানমন্ত্রীর এই ভাতুষ্পুত্র।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ
মো. আব্দুস শহীদ বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪ এর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সপ্তম বারের মতো সংসদ সদস্য হলেন।
মির্জা আজম
জামালপুর-৩ আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম। স্কুলজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি ১৯৯১ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি অষ্টম সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ এবং নবম সংসদে ক্ষমতাসীন দলের হুইপ ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য হলেন এই প্রবীন নেতা।
বীর বাহাদুর উশৈ সিং
জাতীয় সংসদের ৩০০তম আসন পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই আসনে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত নেতা বীর বাহাদুর উশৈ সিং। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সপ্তমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
আ ক ম মোজাম্মেল
গাজীপুর-১ আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
জাহিদ আহসান রাসেল
গাজীপুর-২ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এবার জয়ের মধ্যে দিয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি হলেন।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।