কুষ্টিয়ায় প্রকট হচ্ছে আ.লীগের গৃহদাহ এমপি ও নেতাদের ভাইয়েরা প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
কুষ্টিয়ায় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের গৃহদাহ আরও প্রকট হচ্ছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলার নেতারা প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। দলীয় প্রার্থী না দিলেও দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতারা নিজের ভাইদের প্রার্থী করছেন। জেলার দুই উপজেলায় স্থানীয় এমপির ভাই ও এক উপজেলায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলে।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বর্তমান-সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গ্রুপিংয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের প্রভাবশালী তিন নেতা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে এ উপজেলায়। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপেই এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান এমপি আব্দুর রউফ সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-মাছুম মোর্শেদ শান্ত। সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন তারই ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রহিম উদ্দিন খান।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার বলেন, সদর উদ্দিন খান দলের সভাপতি হয়েও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। এখন নিজের ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে মাঠে ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব বাদশা। ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। দিনরাত করেছেন গণসংযোগ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আর চেয়ারম্যান প্রার্থী হননি বাদশা। চাপের মুখে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী না হয়ে আবারও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বাদশা বলেন, আমার কিছুই করার নেই। দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে। এ উপজেলায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার ও এবি পার্টির আবু আহাদ আল মামুন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। আর এবি পার্টির আবু আহাদ আল মামুনও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। সেক্ষেত্রে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার।
দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর আপন ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। এ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাজ আহমেদ মামুন। এমপির একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ভাইকে প্রার্থী করায় একজোট হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরোয়ার জাহান বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমনসহ উপজেলার নেতারা বৈঠক করে প্রার্থী ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। তাদের প্রার্থী হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকার হাসুর নাম শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী ও হাসানুল আসকার হাসু প্রার্থী হলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের মধ্যে আরও চাঙা হবে গ্রুপিং। হাসানুল আসকার হাসু বলেন, বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমাকে প্রার্থী করলে অবশ্যই নির্বাচন করব। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় নির্বাচনের চেষ্টা করবে। মিডিয়াসহ সবাই সহযোগিতা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব হবে।
কুমারখালী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুণের ভাতিজা ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা তরুণের ছেলে গোলাম মোর্শেদ পিটার। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের ভাতিজা। জর্জ নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এখানকার বর্তমান এমপি আব্দুর রউফ। তার সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান। এ উপজেলায় বর্তমান ও সাবেক এমপির মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় জ্বলছে এ উপজেলা। নির্বাচন-পরবর্তী তিন মাসে দুপক্ষের খুন হয়েছে দুজন। আহত হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। আগুন জ্বলেছে ডজনখানেক বাড়িতে। লুটপাট হয়েছে শতাধিক বাড়িঘরে। উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় কোন্দল এবং বিভক্তি বিদ্যমান থাকায় সহিংসতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, কুষ্টিয়ার একাধিক উপজেলায় এমপি ও নেতাদের ভাই বা আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলের থেকে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে ভাইকে প্রার্থী করে কোনো প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।