কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন, প্রমাণ করুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান: শেখ হাসিনা


আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান আছে- সেটি প্রমাণ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যেন না হয় সেজন্য এখনো যড়যন্ত্র চলছে। সবাই শান্তিপূর্ণ থাকবেন। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। প্রমাণ করবেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নিজেরা নির্বাচনে যাবে না, অন্যদেরও ভোট দিতে দেবে না। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকার শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে এটিই আওয়ামী লীগের শেষ নির্বাচনি জনসভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। মিলিটারি ডিকটেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা সেই একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০ সিট পয়ে হেরে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেবার বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট ছিল। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি সিট। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। বাকিগুলো আমাদের যারা জোটে ছিল তারা পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার ৮শর বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। এটাই তারা পারে। আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না। তিনি বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি থাকলে পেছনের দিকে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে দুঃশাসন, দুর্নীতি করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো মানুষের ওপর অত্যাচার করে। শেখ হাসিনা তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, মুজিববর্ষে আমার অঙ্গীকার ছিল কোনো কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীনদের ভূমি দিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করেছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়েছি। এখন আর শিশুদের জন্য বই কিনতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। তবে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। অযথা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের নতুনভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন দেওয়া। তিনি বলেন, করোনার সময়ে বিনা টাকায় টিকা দিয়েছি। শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছি। দলিত সম্প্রদায়ের আরও ফ্ল্যাট বানিয়ে দেব। আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি মানুষ হত্যা করে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। পুলিশকে হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতি বাড়িতে হামলা করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজকে আমরা ২০২৪-এ পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের প্রাচীন প্রজ্ঞাশীল সংগঠন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা কারোর ওপর মুখাপেক্ষী না। বাংলাদেশ কারোর ওপর নির্ভর করবে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।