সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটগুলো।
পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারার দল হিসাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে সরকার ও সরকারি দল এখন দিশেহারা। এবার বিজয়ী হয়ে মানুষ ঘরে ফিরবে।
বেলা ১১টায় পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত পদযাত্রা করে।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভোট ডাকাত দুর্নীতিবাজ সরকারকে বিদায় দেওয়া হবে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এই সরকার এখন দিশেহারা। এজন্য তারা বিরোধীদের ওপর হামলা করছে। আগামীতে এদের প্রতিটি অপরাধের বিচার করা হবে।
মঙ্গলবার পদযাত্রা কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল থেকে সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাদের নেই।
শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে গুলির তীব্র নিন্দা জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, হামলা ও গুলি করে সরকার এই বার্তা দিতে চায়, আপনারা ঘরে বসে থাকেন, রাস্তায় নামবেন না। কিন্তু এবার মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন, এখন ২০২৩ সাল। এটাকে ২০১৪ বা ২০১৮ সাল মনে করলে হবে না। কারণ, এখন হামলা করা হলে জনগণ মোকাবিলা করতে শুরু করেছে।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ফরিদুল হক প্রমুখ।
১২ দলীয় জোট: বিকালে কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত পদযাত্রা করে ১২ দলীয় জোট। পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচিতে যেভাবে বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ লীগ হামলা চালিয়েছে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। জনগণের প্রতিরোধের মুখে এই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে, পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
জোট প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন-জোটের মুখপাত্র কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, তমিজ উদ্দিন টিটু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আব্দুল মালিক চৌধুরী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের মাওলানা আব্দুল করিম প্রমুখ।
এলডিপি: বিকালে পূর্ব পান্থপথ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ হয়ে খিলগাঁও রেলগেটে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে দলটির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, আমরা যেদিন কর্মসূচি পালন করি ওই দিন শান্তি সমাবেশের নামে সরকার সারা দেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে। আওয়ামী লীগ শান্তি নয়, অশান্তিতে বিশ্বাসী।
পদযাত্রায় আরও অংশ নেন-এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. নেওয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, মাহে আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন, বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট নিলু, মেহেদী হাসান মাহবুব, আলী আজগর বাবু, ওমর ফারুক সুমন প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: বেলা ১১টায় পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘুরে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে ইত্তেফাক মোড়ে গিয়ে পদযাত্রা শেষ করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
এতে জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এক দফার আন্দোলন চলবে।
এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সভাপতিত্ত্বে আরও বক্তব্য দেন-জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ।
গণফোরাম ও পিপলস পার্টি : বেলা ৩টায় মতিঝিলের গণফোরাম চত্বর থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করে গণফোরাম (একাংশ) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণফোরাম (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, মহাদুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ মানে না। পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।
আরও বক্তব্য দেন-বাংলাদেশ পিপলস পার্টির বাবুল সরদার চাখারী, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, খান সিদ্দিকুর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, সানজিদ রহমান শুভ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আবদুল কাদের, আতিকুর রহমান লিটন প্রমুখ।
এছাড়াও রাজধানীতে পদযাত্রা বের করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে পল্টন মোড় থেকে শুরু করে বিজয়নগর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা, পানির ট্যাংকি হয়ে ফকিরাপুল গিয়ে শেষ করে পদযাত্রা।
এতে আরও অংশ নেন-কেন্দ্রীয় নেতা হিন্দুরত্ন রামকৃষ্ণ সাহা, মুফতি তরিকুল ইসলাম সাদী, খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম, রাসেল সিকদার লিটন, মনির হোসেন, নাসিমা নাজনিন সরকার প্রমুখ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।