চামড়া শিল্প: সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে


দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত চামড়া শিল্প। মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে অন্য সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছে এ খাত থেকে। উল্লেখ্য, দেশে মোট চামড়ার বড় একটি অংশ সংগৃহীত হয় কুরবানির ঈদের সময়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির চামড়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। শনিবার খবরে প্রকাশ-সিন্ডিকেটের প্রভাবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গেল কয়েক বছর ধরে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া সংগ্রহ করলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে লাভে বিক্রি করতে পারছেন না। আগের অভিজ্ঞতার আলোকে তাই এ বছরও পশুর চামড়ার প্রকৃত মূল্য মিলবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এদিকে ব্যাংক কুরবানির সময় চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দিলেও সিংহভাগই ফেরত পায় না। খেলাপি ঋণ নবায়নে ব্যাংকগুলো একাধিকবার বিশেষ সুযোগ দিলেও তা কাজে আসছে না। পরিসংখ্যান বলছে, চামড়া খাতে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৯১ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলো এখন হাতে গোনা কয়েকজন ভালো উদ্যোক্তা ছাড়া অন্য কাউকে ঋণ দিতে চাচ্ছে না। অতীতে ট্যানারি ও আড়তদারদের কারসাজিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া চামড়ার দাম অকার্যকর হতে দেখা গেছে। ফলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এমনকি ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা, নদী-নালা বা রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তাই এবার যাতে অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা সিন্ডিকেট কারসাজি করতে না পারে সেদিকে সরকারকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া কাঁচা চামড়া যাতে পাচার হতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি বাড়াতে হবে। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। ব্যবসায়ীদেরও ঋণের টাকার যথাযথ ব্যবহার ও পরিশোধে আন্তরিক হতে হবে। কুরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে সাধারণ ও ক্ষুদ্র এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন যারা চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদার তথা দেশের হতদরিদ্র মানুষ। লাভজনক ও সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।