ছিচকে মাস্তান থেকে রাজশাহীর “এরশাদ শিকদার” আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মাহাতাব


রাজশাহী বাস টার্মিনালের ছিচকে চোর ও টোকাই থেকে শুরু।উত্থানের এক পর্যায়ে হয়ে যান রাজশাহী জেলা মোটর ইউনিয়নের সদস্য, এরপর সন্ত্রাসী কায়দায় বাগিয়ে নেন সাধারণ সম্পাদক পদ।মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হওয়া মাহাতাব উচ্চমাত্রায় একজন নারী লোভী,তার ওয়ার্ডে প্রায় ডজনখানেক অসহায় ও দরিদ্র নারীদের সাথে করেছেন জবরদস্তি।অর্থ লুটপাট ও পেশী শক্তিতে হয়েছেন শ্রমিক নেতা।পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাদক ও জুয়াসহ কালো জগতের মাফিয়া ডন, নামের শেষে চৌধুরী লাগিয়ে, এখন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী।বর্তমানে তাকে রাজশাহীর এরশাদ শিকদার বলেও অভিহিত করছেন কিছু মানুষ। বর্তমানে তিনি ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।এই কাউন্সিলর নিজ ওয়ার্ডেও তৈরি করেছেন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী দল ও কিশোর।ভূমি দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই, যেখানে তার বিচরণ নাই। অভিযোগ আছে,এক নারীকে পেতে ঐ পরিবারকে মামলা হামলাসহ ধ্বংস করেছেন এই মাহাতাব।মেয়েটিকে রক্ষিতা করতে মরিয়া হয়ে, শেষে সফল হয়েছেন তিনি।এমন বহু পরিবারের মেয়েদের দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছে সে। সংগঠনের শ্রমিকদের চাঁদার টাকা, শ্রমিক কার্ড বিক্রি,ভবনসহ জমি বিক্রির অন্তত ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।এছাড়াও কাউন্সিলর হিসেবে জড়িয়েছেন নানা অপকর্মে। ওয়ার্ডে আছে তার টর্চার সেল।ওয়ার্ডে তাঁর বিপক্ষে কেউ কথা বললেই ওই টর্চার সেলে চলে নির্যাতন। তদন্তে উঠে আসে,শ্রমিক সংগঠনের সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই বেআইনিভাবে আনুমানিক ৭০০ সদস্য কার্ড বিক্রি করেছেন।এ হিসাবে সদস্য কার্ডের মূল্য ২১ লাখ টাকা; যা সম্পূর্ণ আত্মসাত করা হয়েছে।রাজশাহী বাইপাস সংলগ্ন ললিতহার মৌজার ১৯ কাঠা জমির (দলিল নম্বর-৯৪১৭) মধ্যে ১৬ কাঠা বিক্রি করেছেন পানির দামে।মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দাম দেখিয়ে বাকি অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মাহাতাব।টার্মিনালের পাশে মেইন রোড সংলগ্ন শিরোইল মৌজার একতলা আরসিসি পাকা বিল্ডিংসহ জমির পরিমাণ .০৯৭৭ শতাংশ (দলিল নম্বর- ৬২৪২) রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনয়নের নামে।এটি জনৈক হাশেম আলীর কাছে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী।কিন্তু বর্তমানে ঐ বিল্ডিং ও জমির দাম প্রায় ৮ কোটি টাকা।এই টাকাও এককভাবে আত্মসাত করেছেন তিনি।তার কাছে শেয়ারহোল্ডার মূল্যে জমির মালিক সদস্যগণ হিসাব চাইতে গেলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন।কার্ডের মাসিক চাঁদা বন্ধ করে দেন।এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা একাধিক মামলাও করেছেন। নাম প্রকাশে একাধিক মোটর শ্রমিক বলেন,এক দশক ধরে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। সম্পাদক হওয়ার পরে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ লুটপাট করে হয়েছেন ১০টি বাসের মালিক।বাস মালিক হয়েও তিনি এখনও শ্রমিক নেতা।একটি পাঁচতলা বাড়িতে থাকেন, আরেকটি ১০ তলা অট্টালিকা নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।চড়েন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নকে দেননি আয়-ব্যয়ের হিসাব।রয়েছে অডিট আপত্তি।অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাহাতাব গড়েছেন অঢেল সম্পদ। এছাড়া শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত করেছেন মাহাতাব।দেননি মৃত্যুকালীন ও কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার অনুদান, শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, শ্রমিকনেতাদের সম্মানি এবং কর্মচারীদের বেতন ভাতা।এর মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ সমস্ত অপকর্মের দায়ে দুবার শোধরানোর নোটিশ দিয়েও তাকে শোধরাতে না পেরে বহিস্কার করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১০টি যাত্রীবাহী বাসের মালিক মাহাতাব।এর মধ্যে চারটি বাস স্ত্রীর নামে রয়েছে।বাকিগুলোর মালিক মাহাতাব হলেও সেগুলো বিভিন্ন নামে-বেনামে চলছে।এসব বাসের আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা।রাজশাহীর অন্য বাস মালিকরা একদিন পরপর রাস্তায় চলার (রুট পারমিট) অনুমতি পান।কিন্তু মাহাতাবের বাস এ নিয়মের মধ্যে নেই। মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায় ললিতহার মৌজায় ইউনিয়নের ১৬ কাঠা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন মাহাতাব।জমিটি ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন দ্বিতীয় তলা ভবন বিক্রি করে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মাহাতাব।শ্রমিকদের কার্ড বিক্রির এক কোটি টাকারও হিসাব দেননি তিনি। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহণ থেকে দৈনিক আয় হয় ৫০ হাজার টাকা।এরও কোনো হিসাব নেই।শুধু এ খাত থেকে মাহাতাব প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।জেলার বাঘা এবং গোদাগাড়ী শাখা কার্যালয় সাত লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।সেই টাকারও হিসাব দেননি। মাহাতাব শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করছেন না।প্রায় একশ শ্রমিকের মৃত্যুকালীন অনুদানেরর টাকা, মৃত শ্রমিকদের পরিবারের টাকা, ২৫০ জন কন্যাদায়গ্রস্ত শ্রমিকের অনুদানের টাকা।এসব হিসাবে এক কোটি টাকা আটকে রেখেছেন মাহাতাব।রয়েছে শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতার টাকাও।প্রতি শ্রমিক তাদের সন্তানদের জন্য ২০ হাজার টাকা করে শিক্ষা ভাতা পাওয়ার বিধান রয়েছে।কিন্তু এক্ষেত্রেও বঞ্চিত হয়েছেন তারা।৫০ শিক্ষার্থীর ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মাহাতাব।এছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মচারী ও নেতাদের নয় মাসের আড়াই কোটি টাকা সম্মানি বকেয়া রয়েছে।কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকের দুই বছর পর্যন্ত সম্মানি আটকে রেখেছেন মাহাতাব। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাহাতাব প্রথম দফায় সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম আনিসুর রহমান অ্যান্ড কোংয়ের নিরীক্ষায় ১ কোটি ৮১ লাখ ৭ হাজার ৪৬৬ টাকা অডিট আপত্তি ধরা পড়ে।আজও এর নিষ্পত্তি হয়নি।অডিটে শিরোইল টার্মিনাল সংলগ্ন জমিসহ দ্বিতীয় তলা ভবন বিক্রির ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।একই অডিটে সদস্য চাঁদার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১৬০ টাকা ক্যাশবুকে আয় হিসাবে দেখানো হয়নি।এছাড়া বিভিন্ন খাতে আরও অনিয়ম ধরা পড়েছে। এসব অনিয়ম আর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা মাহাতাব হোসেন অস্বীকার করে বলেন,তিনি কারো প্রতি কোন অন্যায় করেন নি।তবে সম্পদের বিবরণীর বিষয়টি স্বীকার করেন।