ছুটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বাড়িতে আসার কথা ছিল পারভেজের


ছুটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বাড়িতে আসার কথা ছিলো পারভেজের, বাড়িতে ঠিকই আসবে। কিন্তু আর জীবিত নয়। নিহত হয়ে কফিনে করে। নিহত পারভেজের বৃদ্ধ বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা কান্নায় ভে‌ঙ্গে প‌ড়ে উপরের কথা বার বার বল‌ছি‌লেন। তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হ‌য়ে আস‌ছিল। তিনি বলেন, দুই দিন আগে তার মাকে ফোন করে এই কথাগু‌লো বল‌ছিল প‌ারভেজ। রাজধানীতে সরকারী দায়িত্ব পালনকা‌লে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ (৩২) এর মৃত্যু মানতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী। তিন ভাই-বো‌নের ম‌ধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ এবং সংসা‌রে একমাত্র উপ‌ার্জনক্ষম। ছোট ভাই আজিজুল হক বিপ্লব এইচএসসি পাশের পর থেকে বেকার। তার এই অনাকা‌ঙ্খিত মৃতু‌তে এলাকায় শো‌কের ছায়া নে‌মে‌ছে। নিহত পারভেজের বাড়ি চরকাটারী ইউনিয়‌নের ল‌কের মোল্লার পাড়ায় ছিল। গত বছর তা‌দের বা‌ড়ি নদীভাঙ্গ‌নে বিলীন হওয়ায় তারা সপ‌রিবা‌রে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপ‌জেলার ফয়েজপু‌রে চলে যান। তার বাবা সেকান্দার মোল্লা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পারভেজ ২০০৯ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বোলদার ইউনিয়নে বিয়ে করেন। সংসারে ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পারভেজ ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন। নয়াপল্টনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় পারভেজের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পারভেজের একমাত্র বড় বোন শেফালী আক্তার। আর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে পারভেজের ছোট্ট মেয়ে তানহা। পারভেজের ছোট ভাই আজিজুল হক বলেন, বৃদ্ধ বাবা ভাইয়ের এই অকাল মৃত্যু সইতে পারছেন না। খবর শোনার পর থেকেই তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। ভাই বিয়ের পর ভাবিকে নিয়ে ঢাকায় বাসাভাড়া করে থাকতেন। ছুটি পেলেই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি আসতেন। এখন আর ভাই আসবে না। তিনি বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এইভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আন্দোলনের নামে মানুষকে পিটিয়ে মারতে হবে, এ কেমন আন্দোলন। এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। চরকাঁটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, নিহত পারভেজ এলাকার একজন শান্তশিষ্ট ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। পারভেজ নিহত হওয়ার খবর এলাকায় আসার পর নিহত পারভেজের মা রহিমা খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ওই পুলিশ সদস্যের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকায় জানাজা হবে। এরপর মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। নিহতের পরিবার যেভাবে চাইবে সেভাবে হবে। তার জানাজা ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সহ সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।